১০:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চোখের ক্যান্সারের ৭টি প্রাথমিক লক্ষণ: অবহেলা করলে হারাতে পারেন দৃষ্টিশক্তি

চোখ শুধু দৃষ্টির অঙ্গ নয়, এটি আমাদের শরীরের অন্যতম সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অথচ এই চোখেই নীরবে বাসা বাঁধতে পারে এক প্রাণঘাতী রোগ—চোখের ক্যান্সার। অনেক সময় কোনো স্পষ্ট উপসর্গ ছাড়াই ধীরে ধীরে এটি বাড়তে থাকে। কিন্তু প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিনে ফেলতে পারলে সময়মতো চিকিৎসা নিয়ে চোখ ও জীবন দুটোই বাঁচানো সম্ভব।

চোখের ক্যান্সার আসলে কী?

চোখের ক্যান্সার হলো চোখের ভেতর বা আশপাশের টিস্যুতে কোষের অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। সাধারণত এটি তিন রকম হতে পারে—ইনট্রাওকুলার মেলানোমা, যা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়; রেটিনোব্লাস্টোমা, যা শিশুদের মধ্যে ঘটে; এবং লিম্ফোমা, যা দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা দেয়।
চোখের রেটিনা, আইরিস কিংবা আশপাশের টিস্যুতে টিউমার তৈরি হয়ে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করতে পারে। যেহেতু এটি অনেক সময় চোখের ভেতরেই গড়ে ওঠে, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়া কঠিন হয়। তাই নিয়মিত চোখ পরীক্ষা ও সচেতনতা খুবই জরুরি।

চোখের ক্যান্সারের প্রাথমিক ৭টি সতর্ক সংকেত

১. ঝাপসা বা বিকৃত দৃষ্টি:
দৃষ্টিশক্তি হঠাৎ ঘোলাটে হয়ে যাওয়া, ফোকাস করতে অসুবিধা, রঙ বা আকৃতি বিকৃত দেখা—এসবই চোখের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। সময়ের সঙ্গে এক বা দুই চোখেই দৃষ্টি আরও দুর্বল হতে পারে।

২. চোখে আলো ঝলকানো বা কালো দাগ ভাসা:
চোখে ফ্ল্যাশের মতো আলো দেখা বা ভাসমান কালো ছোপগুলো ঘন ঘন দেখা দিলে সতর্ক হোন। এটি রেটিনার ওপর চাপ তৈরি হওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।

৩. চোখের সাদা বা রঙিন অংশে কালো দাগ:
আইরিস বা সাদা অংশে নতুন কোনো কালো দাগ দেখা দিলে, বা পুরনো দাগের রঙ ও আকার পরিবর্তন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এগুলো অনেক সময় ক্যান্সারের প্রাথমিক চিহ্ন হতে পারে।

৪. চোখের মণির আকারে পরিবর্তন:
দুটি চোখের মণি যদি আর সমান না থাকে, ওভাল বা বিকৃত দেখায়, কিংবা আলোয় সাড়া না দেয়—তবে তা হতে পারে চোখের অভ্যন্তরে টিউমারের ইঙ্গিত।

৫. পার্শ্বীয় দৃষ্টিশক্তি হারানো:
চারপাশের বস্তু না দেখা বা বারবার ধাক্কা খাওয়ার অভ্যাস যদি তৈরি হয়, তা রেটিনা বা অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।

৬. এক চোখ ফোলা বা চোখের আশপাশে গাঁট:
চোখের পেছনে টিউমার তৈরি হলে চোখ ফুলে যেতে পারে বা পাতা চওড়া হয়ে দেখা দিতে পারে। সময়ের সঙ্গে তা আরও দৃশ্যমান হয়।

৭. চোখে লালচেভাব, জ্বালা বা ব্যথা:
দীর্ঘদিন চোখ লাল থাকা, জ্বালা বা ব্যথা বাড়তে থাকা এবং চোখে চাপ অনুভব করা—এসবই হতে পারে চোখের ক্যান্সারের অগ্রসর লক্ষণ।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

উপরের যেকোনো উপসর্গ যদি সময়ের সঙ্গে কমে না এসে বাড়তে থাকে, তাহলে দেরি না করে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে চিকিৎসা অনেক সহজ এবং দৃষ্টিশক্তি রক্ষা সম্ভব। যাদের পরিবারে মেলানোমার ইতিহাস আছে, হালকা চোখের রঙ রয়েছে, বা সূর্যালোকে বেশি সময় কাটান—তাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত।

চোখের ক্যান্সার ভয়াবহ হলেও, সময়মতো শনাক্ত ও চিকিৎসা নিলে এটি মোকাবিলা করা সম্ভব। তাই চোখের যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তনকে অবহেলা করবেন না—কারণ আপনার চোখই আপনাকে পৃথিবী দেখার জানালা।

ট্যাগ
জনপ্রিয় সংবাদ

যে রক্তের গ্রুপে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি! নতুন গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য

চোখের ক্যান্সারের ৭টি প্রাথমিক লক্ষণ: অবহেলা করলে হারাতে পারেন দৃষ্টিশক্তি

আপডেট সময়ঃ ০২:১১:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫

চোখ শুধু দৃষ্টির অঙ্গ নয়, এটি আমাদের শরীরের অন্যতম সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অথচ এই চোখেই নীরবে বাসা বাঁধতে পারে এক প্রাণঘাতী রোগ—চোখের ক্যান্সার। অনেক সময় কোনো স্পষ্ট উপসর্গ ছাড়াই ধীরে ধীরে এটি বাড়তে থাকে। কিন্তু প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিনে ফেলতে পারলে সময়মতো চিকিৎসা নিয়ে চোখ ও জীবন দুটোই বাঁচানো সম্ভব।

চোখের ক্যান্সার আসলে কী?

চোখের ক্যান্সার হলো চোখের ভেতর বা আশপাশের টিস্যুতে কোষের অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। সাধারণত এটি তিন রকম হতে পারে—ইনট্রাওকুলার মেলানোমা, যা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়; রেটিনোব্লাস্টোমা, যা শিশুদের মধ্যে ঘটে; এবং লিম্ফোমা, যা দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা দেয়।
চোখের রেটিনা, আইরিস কিংবা আশপাশের টিস্যুতে টিউমার তৈরি হয়ে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করতে পারে। যেহেতু এটি অনেক সময় চোখের ভেতরেই গড়ে ওঠে, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়া কঠিন হয়। তাই নিয়মিত চোখ পরীক্ষা ও সচেতনতা খুবই জরুরি।

চোখের ক্যান্সারের প্রাথমিক ৭টি সতর্ক সংকেত

১. ঝাপসা বা বিকৃত দৃষ্টি:
দৃষ্টিশক্তি হঠাৎ ঘোলাটে হয়ে যাওয়া, ফোকাস করতে অসুবিধা, রঙ বা আকৃতি বিকৃত দেখা—এসবই চোখের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। সময়ের সঙ্গে এক বা দুই চোখেই দৃষ্টি আরও দুর্বল হতে পারে।

২. চোখে আলো ঝলকানো বা কালো দাগ ভাসা:
চোখে ফ্ল্যাশের মতো আলো দেখা বা ভাসমান কালো ছোপগুলো ঘন ঘন দেখা দিলে সতর্ক হোন। এটি রেটিনার ওপর চাপ তৈরি হওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।

৩. চোখের সাদা বা রঙিন অংশে কালো দাগ:
আইরিস বা সাদা অংশে নতুন কোনো কালো দাগ দেখা দিলে, বা পুরনো দাগের রঙ ও আকার পরিবর্তন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এগুলো অনেক সময় ক্যান্সারের প্রাথমিক চিহ্ন হতে পারে।

৪. চোখের মণির আকারে পরিবর্তন:
দুটি চোখের মণি যদি আর সমান না থাকে, ওভাল বা বিকৃত দেখায়, কিংবা আলোয় সাড়া না দেয়—তবে তা হতে পারে চোখের অভ্যন্তরে টিউমারের ইঙ্গিত।

৫. পার্শ্বীয় দৃষ্টিশক্তি হারানো:
চারপাশের বস্তু না দেখা বা বারবার ধাক্কা খাওয়ার অভ্যাস যদি তৈরি হয়, তা রেটিনা বা অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।

৬. এক চোখ ফোলা বা চোখের আশপাশে গাঁট:
চোখের পেছনে টিউমার তৈরি হলে চোখ ফুলে যেতে পারে বা পাতা চওড়া হয়ে দেখা দিতে পারে। সময়ের সঙ্গে তা আরও দৃশ্যমান হয়।

৭. চোখে লালচেভাব, জ্বালা বা ব্যথা:
দীর্ঘদিন চোখ লাল থাকা, জ্বালা বা ব্যথা বাড়তে থাকা এবং চোখে চাপ অনুভব করা—এসবই হতে পারে চোখের ক্যান্সারের অগ্রসর লক্ষণ।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

উপরের যেকোনো উপসর্গ যদি সময়ের সঙ্গে কমে না এসে বাড়তে থাকে, তাহলে দেরি না করে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে চিকিৎসা অনেক সহজ এবং দৃষ্টিশক্তি রক্ষা সম্ভব। যাদের পরিবারে মেলানোমার ইতিহাস আছে, হালকা চোখের রঙ রয়েছে, বা সূর্যালোকে বেশি সময় কাটান—তাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত।

চোখের ক্যান্সার ভয়াবহ হলেও, সময়মতো শনাক্ত ও চিকিৎসা নিলে এটি মোকাবিলা করা সম্ভব। তাই চোখের যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তনকে অবহেলা করবেন না—কারণ আপনার চোখই আপনাকে পৃথিবী দেখার জানালা।