
চোখ আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি, যার মাধ্যমে আমরা পৃথিবীকে দেখি, বুঝি এবং অনুভব করি। কিন্তু অযত্ন, দূষণ, খাদ্যাভ্যাস ও বয়সজনিত নানা কারণে চোখের বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। সময়মতো সচেতন না হলে এসব রোগ দৃষ্টিশক্তির স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে। চলুন জেনে নিই চোখের সাধারণ কিছু রোগ, তাদের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে।
চোখের সাধারণ রোগসমূহ:
১. চোখের শুষ্কতা (Dry Eye)
কারণ: দীর্ঘ সময় কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকা, বয়সজনিত পরিবর্তন, ধুলাবালি, বাতাসে আর্দ্রতার অভাব।
লক্ষণ: চোখে জ্বালা, খুশকি অনুভব, ঝাপসা দেখা, চোখে পানি পড়া।
প্রতিরোধ: স্ক্রিন টাইম কমানো, চোখে কৃত্রিম অশ্রু (lubricant drops) ব্যবহার, পর্যাপ্ত পানি পান।
২. চোখের এলার্জি (Allergic Conjunctivitis)
কারণ: ধুলাবালি, ফুলের পরাগ, মেকআপ বা কেমিক্যাল দ্রব্য।
লক্ষণ: চোখ লাল হওয়া, চুলকানি, পানি পড়া, ফুলে যাওয়া।
প্রতিরোধ: অ্যালার্জির উৎস থেকে দূরে থাকা, ঠান্ডা পানির ঝাপটা দেওয়া, প্রয়োজনে অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার।
৩. চোখের ছানি (Cataract)
কারণ: বয়সজনিত পরিবর্তন, ডায়াবেটিস, UV রশ্মি, ধূমপান।
লক্ষণ: ঝাপসা দেখা, রাতে আলো দেখে অস্বস্তি, রঙ কম উজ্জ্বল দেখা।
প্রতিরোধ: সানগ্লাস পরা, সুষম খাদ্য গ্রহণ, ধূমপান বর্জন, নিয়মিত চোখ পরীক্ষা।
৪. গ্লুকোমা (Glaucoma)
কারণ: চোখের ভেতরের চাপ বৃদ্ধি, বংশগত কারণ।
লক্ষণ: দৃষ্টির পরিধি সংকুচিত হওয়া, চোখে ব্যথা, চোখ লাল হওয়া।
প্রতিরোধ: ৪০ বছর পার হলে বছরে অন্তত একবার চোখের প্রেসার পরীক্ষা করা, নির্ধারিত ওষুধ ব্যবহার।
৫. ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি
কারণ: দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।
লক্ষণ: দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, চোখের সামনে কালো দাগ দেখা, হঠাৎ ঝাপসা দেখা।
প্রতিরোধ: রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত চোখ পরীক্ষা।
চোখের সুস্থতা রক্ষায় করণীয়:
সঠিক খাদ্যাভ্যাস: ভিটামিন A, C, E সমৃদ্ধ খাদ্য, যেমন গাজর, পালংশাক, ডিম, মাছ খাওয়া।
স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ: ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলুন — প্রতি ২০ মিনিট পর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের দিকে তাকান।
সানগ্লাস ব্যবহার: রোদে বাইরে গেলে UV প্রটেকশনযুক্ত সানগ্লাস পরুন।
চোখের ব্যায়াম ও বিশ্রাম: চোখের পলক ফেলা, ঘন ঘন চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম দেওয়া।
নিয়মিত চোখ পরীক্ষা: প্রতি বছর একবার হলেও চোখের চেকআপ করান।
উপসংহার
চোখের যত্ন নেওয়া মানে শুধু দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করা নয়, বরং একটি উন্নত জীবনধারার ভিত্তি তৈরি করা। তাই সচেতন হোন, নিয়মিত চোখের পরিচর্যা করুন এবং যেকোনো সমস্যা হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।