
মানবদেহের জেনেটিক জগত আজও রহস্যে ভরা। সেই রহস্যের মধ্যেই একটি বিরল ও চমকপ্রদ রোগের নাম হলো ওয়্যারওলফ সিনড্রোম, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় হাইপারট্রাইকোসিস (Hypertrichosis)। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর, এমনকি মুখ পর্যন্ত ঘন ও অস্বাভাবিক লোমে ঢেকে যায়, যা অনেক সময় তাকে দেখতে নেকড়ের মতো করে তোলে। তাই একে ‘ওয়্যারওলফ সিনড্রোম’ নামে ডাকা হয়।
রোগটি কেন হয়?
হাইপারট্রাইকোসিস মূলত একটি জেনেটিক বা বংশগত রোগ। এটি X-ক্রোমোজোমে থাকা এক ধরণের জিন মিউটেশনের কারণে হয়ে থাকে। জন্মগতভাবে এই রোগ নিয়ে কেউ জন্মাতে পারে, আবার কিছু ক্ষেত্রে এটি জীবনের পরে কোনো রোগ, টিউমার বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও দেখা দিতে পারে।
রোগের প্রকারভেদ:
১. Congenital Hypertrichosis – জন্ম থেকেই দেখা দেয়।
২. Acquired Hypertrichosis – পরবর্তীকালে রোগ বা ওষুধের প্রভাবে হয়।
লক্ষণসমূহ:
মুখমণ্ডল, কপাল, কান, হাত-পা ও শরীরের অন্যান্য অংশে ঘন ও অস্বাভাবিক লোম গজানো
কিছু ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা বা ত্বকের সংক্রমণ
মানসিক চাপে ভোগা, আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি
চিকিৎসা ও করণীয়:
বর্তমানে ওয়্যারওলফ সিনড্রোমের স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই। তবে কিছু সাময়িক সমাধান রয়েছে, যেমন:
লেজার হেয়ার রিমুভাল
ইলেক্ট্রোলাইসিস
মনো-সামাজিক কাউন্সেলিং, কারণ রোগীরা অনেক সময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে
সমাজে রোগীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি
ওয়্যারওলফ সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক সময় সমাজে বিদ্রূপের শিকার হন, যা তাদের আত্মসম্মানে আঘাত করে। আমাদের উচিত এই ধরনের বিরল রোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং রোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সম্মানজনক মনোভাব বজায় রাখা।
উপসংহার:
ওয়্যারওলফ সিনড্রোম এক রহস্যময় ও বিরল রোগ হলেও, এটি আমাদের সচেতনতার এবং মানবিকতার এক বড় পরীক্ষাও বটে। অজানা জিনগত সমস্যার প্রতি যতটা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন, ঠিক ততটাই দরকার মানবিক সহানুভূতি।