০৬:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুরুষদের ক্যান্সারের চারটি সতর্কবার্তা: যেগুলো উপেক্ষা করা বিপজ্জনক

 

ক্যান্সার — নামটিই যেন এক ভয়াবহ আশঙ্কার প্রতিচ্ছবি। এটি এমন একটি রোগ, যা নিরবেই শরীরে বাসা বাঁধে এবং অনেক সময় তা ধরা পড়ে অনেক দেরিতে, যখন চিকিৎসা করলেও সুফল পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে, কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণকে ছোটখাটো শারীরিক সমস্যা মনে করে এড়িয়ে যাওয়া হয়, ফলে প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যান্সার শনাক্ত করার সুযোগ হারিয়ে যায়।
চিকিৎসকদের মতে, ক্যান্সার যদি শুরুর দিকেই শনাক্ত করা যায়, তবে তা সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। তাই দেরি না করে জেনে নিন এমন চারটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ যা কখনোই উপেক্ষা করা উচিত নয়।

১. প্রস্রাবে অস্বাভাবিক পরিবর্তন
প্রস্রাবে পরিবর্তন অনেক সময় প্রোস্টেট বা মূত্রাশয়ের ক্যান্সারের ইঙ্গিত দেয়। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
প্রস্রাব শুরু করতে সমস্যা হওয়া
প্রস্রাবের প্রবাহ বন্ধ করতে কষ্ট
দুর্বল স্রোত বা ধীরগতিতে প্রস্রাব হওয়া
প্রস্রাবের সময় জ্বালা বা ব্যথা
অপ্রত্যাশিতভাবে প্রস্রাব ঝরে যাওয়া
প্রস্রাবের ফ্রিকোয়েন্সিতে অস্বাভাবিকতা (দিনে বেশি বার প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি)
২. মুখে অদ্ভুত পরিবর্তন
মুখগহ্বর ক্যান্সার সাধারণত ধূমপান বা তামাক ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হলেও অন্য কারণেও হতে পারে। লক্ষণগুলো হলো:

মুখে বা জিহ্বায় সাদা দাগ
দীর্ঘদিন ধরে মুখ বা গলায় ব্যথা
খাবার গিলতে সমস্যা
দাঁতের অস্থিরতা বা হঠাৎ পড়ে যাওয়া
ঠোঁট বা গালে অসাড়তা বা অতিসংবেদনশীলতা
জিহ্বায় ক্ষত, ঘাঁ বা রক্তপাত
কণ্ঠস্বর পরিবর্তন বা কফে রক্ত পাওয়া
৩. পেট ও পাচনতন্ত্রের সমস্যা
পাকস্থলি, অগ্নাশয়, লিভার বা অন্ত্রের ক্যান্সারের অনেক সময় শুরু হয় হালকা পেটের সমস্যার মাধ্যমে। লক্ষণগুলো হলো:

দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুধামান্দ্য বা অম্বল
বুক জ্বালাপোড়া বা গ্যাস
বমি (রক্তসহ বা রক্ত ছাড়া)
পেটে ব্যথা, ফোলাভাব বা চাপ লাগার অনুভূতি
পায়খানা বা প্রস্রাবে রক্ত
অল্প খেয়েই পেট ভরে যাওয়া
এই লক্ষণগুলো অনেক সময় সিরোসিস বা যক্ষ্মার মতো অন্যান্য রোগের সঙ্গেও সম্পর্কিত হতে পারে, তবে নিয়মিত থাকলে অবহেলা করা উচিত নয়।

৪. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
আপনি যদি ডায়েট বা ব্যায়াম না করে থাকেন, তবুও হঠাৎ করে ওজন অনেকটা কমে যায় — এটি হতে পারে মারাত্মক বিপদের ইঙ্গিত।

অগ্নাশয়, পাকস্থলি বা ফুসফুসের ক্যান্সার
থাইরয়েডের অতিসক্রিয়তা
লিভার সিরোসিস
ডায়াবেটিস বা যক্ষ্মা
উপরের যেকোনো একটি কারণে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাই অযথা দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

শেষ কথা
শরীর নিজের মতো করেই নানা সংকেত দিয়ে বিপদের বার্তা দেয়। এসব সংকেতকে গুরুত্ব না দিলে পরে তা জীবননাশের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে উপরের চারটি লক্ষণকে অবহেলা না করে সময়ে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখবেন, সচেতনতা আর সময়মতো পদক্ষেপই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

ট্যাগ
জনপ্রিয় সংবাদ

পুরুষদের ক্যান্সারের চারটি সতর্কবার্তা: যেগুলো উপেক্ষা করা বিপজ্জনক

আপডেট সময়ঃ ১০:৪১:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫

 

ক্যান্সার — নামটিই যেন এক ভয়াবহ আশঙ্কার প্রতিচ্ছবি। এটি এমন একটি রোগ, যা নিরবেই শরীরে বাসা বাঁধে এবং অনেক সময় তা ধরা পড়ে অনেক দেরিতে, যখন চিকিৎসা করলেও সুফল পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে, কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণকে ছোটখাটো শারীরিক সমস্যা মনে করে এড়িয়ে যাওয়া হয়, ফলে প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যান্সার শনাক্ত করার সুযোগ হারিয়ে যায়।
চিকিৎসকদের মতে, ক্যান্সার যদি শুরুর দিকেই শনাক্ত করা যায়, তবে তা সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। তাই দেরি না করে জেনে নিন এমন চারটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ যা কখনোই উপেক্ষা করা উচিত নয়।

১. প্রস্রাবে অস্বাভাবিক পরিবর্তন
প্রস্রাবে পরিবর্তন অনেক সময় প্রোস্টেট বা মূত্রাশয়ের ক্যান্সারের ইঙ্গিত দেয়। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
প্রস্রাব শুরু করতে সমস্যা হওয়া
প্রস্রাবের প্রবাহ বন্ধ করতে কষ্ট
দুর্বল স্রোত বা ধীরগতিতে প্রস্রাব হওয়া
প্রস্রাবের সময় জ্বালা বা ব্যথা
অপ্রত্যাশিতভাবে প্রস্রাব ঝরে যাওয়া
প্রস্রাবের ফ্রিকোয়েন্সিতে অস্বাভাবিকতা (দিনে বেশি বার প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি)
২. মুখে অদ্ভুত পরিবর্তন
মুখগহ্বর ক্যান্সার সাধারণত ধূমপান বা তামাক ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হলেও অন্য কারণেও হতে পারে। লক্ষণগুলো হলো:

মুখে বা জিহ্বায় সাদা দাগ
দীর্ঘদিন ধরে মুখ বা গলায় ব্যথা
খাবার গিলতে সমস্যা
দাঁতের অস্থিরতা বা হঠাৎ পড়ে যাওয়া
ঠোঁট বা গালে অসাড়তা বা অতিসংবেদনশীলতা
জিহ্বায় ক্ষত, ঘাঁ বা রক্তপাত
কণ্ঠস্বর পরিবর্তন বা কফে রক্ত পাওয়া
৩. পেট ও পাচনতন্ত্রের সমস্যা
পাকস্থলি, অগ্নাশয়, লিভার বা অন্ত্রের ক্যান্সারের অনেক সময় শুরু হয় হালকা পেটের সমস্যার মাধ্যমে। লক্ষণগুলো হলো:

দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুধামান্দ্য বা অম্বল
বুক জ্বালাপোড়া বা গ্যাস
বমি (রক্তসহ বা রক্ত ছাড়া)
পেটে ব্যথা, ফোলাভাব বা চাপ লাগার অনুভূতি
পায়খানা বা প্রস্রাবে রক্ত
অল্প খেয়েই পেট ভরে যাওয়া
এই লক্ষণগুলো অনেক সময় সিরোসিস বা যক্ষ্মার মতো অন্যান্য রোগের সঙ্গেও সম্পর্কিত হতে পারে, তবে নিয়মিত থাকলে অবহেলা করা উচিত নয়।

৪. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
আপনি যদি ডায়েট বা ব্যায়াম না করে থাকেন, তবুও হঠাৎ করে ওজন অনেকটা কমে যায় — এটি হতে পারে মারাত্মক বিপদের ইঙ্গিত।

অগ্নাশয়, পাকস্থলি বা ফুসফুসের ক্যান্সার
থাইরয়েডের অতিসক্রিয়তা
লিভার সিরোসিস
ডায়াবেটিস বা যক্ষ্মা
উপরের যেকোনো একটি কারণে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাই অযথা দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

শেষ কথা
শরীর নিজের মতো করেই নানা সংকেত দিয়ে বিপদের বার্তা দেয়। এসব সংকেতকে গুরুত্ব না দিলে পরে তা জীবননাশের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে উপরের চারটি লক্ষণকে অবহেলা না করে সময়ে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখবেন, সচেতনতা আর সময়মতো পদক্ষেপই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।