
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চলতি সপ্তাহের শেষদিকে রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন। ৭ থেকে ১০ মে পর্যন্ত এই সফরে তিনি মস্কোতে ৯ মে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে জয়লাভের বার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যোগ দেবেন। ক্রেমলিন রোববার এই সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
শি জিনপিংয়ের এই সফর এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ তৃতীয় বছরে গড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দুই নেতার বৈঠক এবং বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে শি’র উপস্থিতি আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে প্রেসিডেন্ট পুতিন বিজয় দিবস উপলক্ষে ৮ থেকে ১০ মে পর্যন্ত তিন দিনের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন, যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই ঘোষণাকে ‘নাটকীয়তা’ বলে মন্তব্য করেছেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর ঠিক আগে বেইজিং ও মস্কো তাদের সম্পর্ককে ‘সীমাহীন অংশীদারিত্ব’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সহযোগিতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ক্রেমলিন সূত্রে জানা গেছে, শি ও পুতিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে দুই দেশের অংশীদারত্বমূলক ও কৌশলগত সম্পর্ক আরও গভীর করার উপায় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী স্থান পাবে। সফরকালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থার মধ্যে একাধিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউক্রেন সংঘাতে চীন প্রথম থেকেই নিজেদের ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থানে রাখার চেষ্টা করলেও পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে, বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন মস্কোকে অনেকাংশে সহায়তা করছে। সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অভিযোগ করেছিলেন যে, চীন রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করছে এবং প্রায় ১৫৫ জন চীনা নাগরিক রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে। তবে বেইজিং এই অভিযোগকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র রোববার বলেছেন, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা যখন গভীর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন চীন ও রাশিয়ার ঐতিহাসিক ও কৌশলগত সম্পর্ক আরও শক্তিশালী ভিত্তি পাবে। তিনি আরও জানান, জাতিসংঘ, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) এবং ব্রিকসের মতো বহুপক্ষীয় মঞ্চে চীন ও রাশিয়া তাদের ঘনিষ্ঠ সমন্বয় আরও বাড়াবে। এই সমন্বয়ের লক্ষ্য হিসেবে ‘গ্লোবাল সাউথকে ঐক্যবদ্ধ করা’, ‘বিশ্ব শাসনব্যবস্থাকে সঠিক পথে চালিত করা’, ‘একপাক্ষিকতা ও দাদাগিরির বিরোধিতা করা’ এবং ‘একটি সমতাভিত্তিক, সুশৃঙ্খল বহুধ্রুব বিশ্ব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্বায়নকে এগিয়ে নেওয়ার’ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট স্মরণ করে চীনা মুখপাত্র বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এশিয়া ও ইউরোপের প্রধান দুই যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে চীন ও রাশিয়া উভয়েই বিশাল ত্যাগ স্বীকার করেছে এবং বিজয়ে ঐতিহাসিক অবদান রেখেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ৯ মে মস্কোর রেড স্কয়ারে আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী সামরিক কুচকাওয়াজে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ছাড়াও রাশিয়ার অন্যান্য মিত্র দেশের নেতারাও উপস্থিত থাকবেন। ক্রেমলিন ইউক্রেনের বর্তমান সংঘাতকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের লড়াইয়ের ধারাবাহিকতা হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে আসছে। শি জিনপিংয়ের এই উপস্থিতি সেই প্রচেষ্টায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।