বিশ্ব শিক্ষক দিবস আজ ৫ অক্টোবর ২০২৩ । বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হচ্ছে। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে পৃথিবীর সব শিক্ষকের প্রতি রইল আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।
শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকতার চেয়ে মহৎ ও শ্রেষ্ঠ পেশা আর হতে পারে না।
এটি যেমন সম্মানজনক, তেমনি এতে রয়েছে আত্মতৃপ্তি। আছে জ্ঞান-অভিজ্ঞতা অন্যদের মধ্যে স্থানান্তরের আনন্দ। একজন আদর্শ শিক্ষক ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী-নির্বিশেষে সবার কাছেই শ্রদ্ধেয়। সব দেশে, সব সমাজেই শিক্ষকরা বিশেষ মর্যাদা পেয়ে থাকেন। তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যেমন ভক্তি পেয়ে থাকেন, তেমনি শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের কাছ থেকেও পেয়ে থাকেন প্রভূত শ্রদ্ধা ও সম্মান। শিক্ষকতাই একমাত্র পেশা, যাতে পেশাদারি মনোভাবের চেয়ে সেবার দিকটাই বেশি পরিস্ফুটিত হয়। তাই এ পেশাকে অনেকেই পেশা না বলে ব্রত বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এবং এটাই হওয়া উচিত।
যারা শিক্ষকতা করেন বা শিক্ষাদান করেন, তারাই শিক্ষক। শিক্ষকদের মর্যাদা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। পবিত্র কোরআনে কারিম এবং হাদিসসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও শিক্ষকদের মর্যাদার কথা ভিন্ন ভিন্নভাবে বলা হয়েছে। এক হাদিসে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে অপরকে কোরআন শিক্ষা দেয় এবং নিজেও শিখে।’
আলোচ্য হাদিসে শেখানোর মর্যাদা তুলে ধরা হয়েছে। অন্য আরেক হাদিসে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। ’
পৃথিবীতে মাতা-পিতার পরেই শিক্ষকদের স্থান। মাতা-পিতা শিশুকে জন্ম দেন আর শিক্ষক তাকে মানুষরূপে গড়ে তোলেন। আজকের পৃথিবীতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারাও যে কোনো শিক্ষকের ছাত্র। শিক্ষকরা সর্বদা মানুষ গড়ার কাজে ব্যস্ত থাকেন।
একটি শিশুর জন্য শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো তার পরিবার এবং শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হলেন শিশুর বাবা-মা। তারপরও প্রচলিত শিক্ষার দায়িত্ব যিনি পালন করেন, তাদেরই আমরা শিক্ষক বলি। শিশুর সুপ্ত প্রতিভাকে বিকাশের জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে যিনি শিক্ষাদান করেন, তিনিই হলেন শিশুর আদর্শ শিক্ষক।
হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, একদা হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার মসজিদে, অর্থাৎ মসজিদে নববিতে সাহাবাদের দু’টি মজলিসের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করলেন। (মজলিস দুটি ছিল একটি দোয়ার ও অন্যটি ইলমের তথা শিক্ষা কার্যক্রমের) এটা দেখে তিনি বললেন, উভয় মজলিসই ভালো কাজে মশগুল আছে, তবে একটি মজলিস অপর মজলিস অপেক্ষা উত্তম। এই যে দলটি যারা দোয়ায় মশগুল আছে, তারা অবশ্য আল্লাহকে ডাকছে এবং আল্লাহর প্রতি নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করছে। আল্লাহপাক চাইলে তাদের (তিনি তাদের বাঞ্ছিত বিষয়) দানও করতে পারেন, আবার চাইলে বঞ্চিতও করতে পারেন। আর এই যে অপর দলটি যারা জ্ঞান চর্চা করছে এবং অন্যান্য অনবহিতদের শিক্ষা দিচ্ছে, তারাই উত্তম। প্রকৃতপক্ষে আমিও একজন শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি। অতঃপর তিনি (সা.) এই (শিক্ষানবিশ) দলের মধ্যেই বসে পড়লেন। -মিশকাত
জিকির, দোয়া ও অন্যান্য ইবাদতের তুলনায় জ্ঞানের মজলিস যে উত্তম, তা হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস ও কাজ দ্বারাই প্রমাণ করে।
হাল সময়ে শিক্ষকতা পেশাকে নানা কারণে অনেকেই ছোট নজরে দেখে থাকেন। ফলে শিক্ষকরাও ভোগেন এক ধরনের হীনমন্যতায়। এটা ঠিক নয়। শিক্ষকরা জাতির কাণ্ডারি। তাই তাদেরও সেভাবেই পথচলা উচিত। এখন শিক্ষকদের অনেকেই সেবার মনোভাব ভুলে অর্থের পেছনে ছুটছেন। অনেকেই মনে করে থাকেন, তারা সব ধরনের জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে; তাদের এ মনোভাব ভুল।
আমি মনে করি, একজন শিক্ষকের নিজের কাছেই নিজের জবাবদিহি করা উচিত। নিয়মিত ক্লাস নেওয়া, অর্পিত কর্তব্য পালন করা, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করা- শিক্ষককে এসব গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। শিক্ষকরা ছাত্রদের পথপ্রদর্শক। তাই তাদের উচিত শিক্ষার্থীদের কাছে নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষা করা। শিক্ষকরা সজীব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাই তাদের নিজেদের মধ্যেও সজীবতা থাকতে হবে। শিক্ষকদের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ থাকাটাও জরুরি। জ্ঞান বিতরণের যে বিষয়টি, তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসা উচিত, এর সঙ্গে কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকা উচিত নয়।
একজন শিক্ষককে অবশ্যই মানবিক গুণাবলির অধিকারী হতে হয়। সততা, কর্মনিষ্ঠা, ধৈর্য, বিনয়, নম্রতা-ভদ্রতা, সময় সচেতনতা- এসব মানবীয় গুণ এ পেশার জন্য খুব বেশি জরুরি। শিক্ষার্থীরা মা-বাবার চেয়েও বেশি প্রভাবিত হতে পারেন একজন শিক্ষকের দ্বারা। তাই শিক্ষকদের মধ্যে এসব গুণ থাকলে শিক্ষার্থীরাও এসব শিখতে পারে। এবারের শিক্ষক দিবসে এই হোক শিক্ষকদের ব্রত- এ প্রত্যাশায়-