
পৃথিবীর সব বাবা-মা চান, তাদের সন্তান সৎ ও চরিত্রবান হোক। তবে অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের কারণেই সন্তান তাদের মনের মতো হয়ে ওঠে না। সন্তান যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন ভ্রূণ অবস্থা থেকেই মায়ের যাবতীয় চালচলন ও গতিবিধির বিস্তর প্রভাব সন্তানের উপর পড়ে। তাই গর্ভাবস্থা থেকেই যেসব আমল আপনার সন্তানকে নেককার বানাতে সহায়তা করবে, তা জানা জরুরি।
মায়ের পায়ের নিচে দেয়া হয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। একজন নারী গর্ভধারণের মাধ্যমে মা হন। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের যে কষ্ট ও বিপন্ন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়, তার পুরস্কার স্বরূপ প্রদান করা হয়েছে মাতৃত্বের এই মর্যাদা। গর্ভে সন্তান আসা নারীর জন্য বোঝা নয়, বরং সম্মান ও সৌভাগ্যের বিষয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ইসলামে গর্ভবতী মায়ের আমল সম্পর্কে।
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ইবাদতের চেয়ে গুনাহ ছেড়ে দেয়াই বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। আর এটা করতে হবে মায়ের ভেতরে বেড়ে ওঠা সন্তানের জন্যই। আল্লাহ বলেন,
“যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে, যদি তোমরা সেসব বড় গুনাহ থেকে বিরত থাকতে পারো, তবে আমি তোমাদের ছোট পাপগুলো ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদের সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাবো।” (সূরা আন-নিসা: ৩১)
গর্ভাবস্থায় মায়েদের অনেক কঠিন সময় পার করতে হয়। এ সময় অসুস্থতা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা ইত্যাদির কারণে ধৈর্যহারা হলে চলবে না। বরং এভাবে ভাবতে হবে — এই সময়টার প্রতিটি মুহূর্ত জিহাদের মতো ইবাদত। এতে ধৈর্য ধারণ করা অনেকটাই সহজ হবে।
মা হওয়ার মাঝেই নারীর জন্মের আনন্দ। তাই মা হওয়ার আনন্দে পুলকিত হওয়া মাত্রই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো, এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; অকৃতজ্ঞ হইও না।” (সূরা আল-বাকারা: ১৫২)
দৈহিক সুস্থতা ও আত্মিক প্রশান্তির ক্ষেত্রে ওজুর ভূমিকা অপরিসীম। বিশেষত ঘুমানোর আগে অজু করে ঘুমানো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“যখন তুমি বিছানায় যাবে, তখন নামাজের অজুর মতো অজু করবে।” (মুসলিম, হাদিস : ৪৮৮
গর্ভাবস্থায় নারীদের মধ্যে অস্থিরতা বেশি কাজ করে। আর যথাসময়ে নামাজ অন্তরকে প্রশান্ত রাখে। তাই গর্ভবতী নারীদের যথাসময়ে নামাজ আদায় করা উচিত।
অস্থিরতা দূরীকরণের কুরআনি ব্যবস্থা হলো — বেশি বেশি জিকির করা। বেশি বেশি জিকির মা ও মায়ের গর্ভের সন্তানকে শান্ত রাখতে সহায়ক হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের মন প্রশান্ত হয় — জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই মন প্রশান্ত হয়।” (সূরা রা’দ: ২৮)
প্রায় ১৯ অথবা ২০তম সপ্তাহে গর্ভের বাচ্চা শোনার ক্ষমতা অর্জন করে। তাই মা যদি প্রতিদিন কুরআন তেলাওয়াত করে, তাহলে গর্ভের সন্তান ও কুরআনের মাঝে মজবুত সম্পর্ক গড়ে ওঠা সম্ভব হয়।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন,
“কুরআনের বিষয়ে তোমাদের উপর অবশ্য পালনীয় — এই কুরআন শিক্ষা করা এবং তোমাদের সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়া। কেননা, এ বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এবং এর প্রতিদানও দেয়া হবে।”