
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও জোর দিয়ে বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া ইসরায়েলের সামনে আর কোনো ‘বিকল্প নেই’। শনিবার (১৯ এপ্রিল) তিনি ঘোষণা করেন, হামাসকে ধ্বংস, জিম্মিদের মুক্ত করা এবং গাজা থেকে ইসরায়েলের জন্য সব হুমকি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এই যুদ্ধ থামবে না। বার্তা সংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে।
নেতানিয়াহু এমন এক সময়ে এই কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করলেন যখন গাজা যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য তিনি নিজ দেশেই ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছেন। জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা এবং সাবেক ও বর্তমান সেনাদের একটি বড় অংশ যুদ্ধের দীর্ঘসূত্রিতা ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদ করছেন।
এই চাপের জবাবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, হামাস সম্প্রতি জিম্মিদের একাংশের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। একইসঙ্গে তিনি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার ব্যাপারে ইসরায়েলের দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথাও পুনরায় উল্লেখ করেন।
এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু রাতের অভিযানেই প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গত এক সপ্তাহে ৪০ জনেরও বেশি হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। এছাড়া, গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতির পর সংঘাত পুনরায় শুরুর পর এই প্রথম নিজেদের একজন সেনা নিহতের খবরও নিশ্চিত করেছে তারা।
ইসরায়েল গাজা উপত্যকা জুড়ে সামরিক অভিযান আরও জোরদার করার ইঙ্গিত দিয়েছে। একইসাথে সেখানে দীর্ঘ সময়ের জন্য দখলদারিত্ব বজায় রাখতে ‘নিরাপত্তা অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথাও জানা গেছে। এর বিপরীতে, হামাস গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবিতে অটল রয়েছে।
গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মহল। জাতিসংঘের তথ্যমতে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় তীব্র মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে এবং অধিকাংশ অধিবাসী দিনে মাত্র এক বেলা খাবার যোগাড় করতে পারছে। উপত্যকার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক ড. হানান বালখি মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তিনি যেন গাজার অবরোধ তুলে নিতে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন।