বিশ্ব / মধ্যপ্রাচ্য

গাজায় যুদ্ধবিরতিতে কোন দেশ কী ভূমিকা রেখেছে?

নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতির অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। এ নিয়ে শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বসেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ঠিক সেসময় যুদ্ধবিরতির পক্ষে-বিপক্ষে খোদ ইসরায়েলের ভেতরই বিক্ষোভ চলছিল। এমনকি ইসরায়েলের কট্টরপন্থি মন্ত্রী বেন গাভির যুদ্ধবিরতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে পদত্যাগের হুমকিও দিয়েছিলেন।

Play Video

তবে সব সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা এ যুদ্ধবিরতির অনুমোদন দেয়। আর এখানে কাজ করেছে কয়েকটি দেশের জোর প্রচেষ্টা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়ছিল যা যুদ্ধবিরতিকে তরান্বিত করেছে।
এর আগেও কাতার ও মিসরে গাজার যুদ্ধবিরতি নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। ইসরায়েলের গোয়েন্দারা বারবার ছুটে গিয়েছেন। তবে কোনো না কোনো পক্ষের অসহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত সেসব প্রচেষ্টা সফলতার মুখ দেখেনি। অবশেষে সেই কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাতেই হলো যুদ্ধবিরতি। তবে এখানে বড় একটি ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

Play Video

গোয়েন্দা কর্মকর্তা, কূটনীতিক ও মধ্যস্থতাকারীরা শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল ও গাজার স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন, এ সংঘাতের সামনে কোনো ফলাফল নেই। নিরপরাধ মানুষের জীবনহানি কোনো পক্ষকে বিজয় দেবে না। যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়াই দুপক্ষের জন্য মঙ্গলজনক।

Play Video

আলোচনায় ইসরায়েলের হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন চৌকস দুজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা। মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়া ও অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিনবেতের প্রধান রনেন বার ইসরায়েলের হয়ে যুদ্ধবিরতির আলোচনা চালিয়ে নেন। অবশ্য পেছন থেকে তাদের দুজনকে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সামরিক ও রাজনৈতিক উপদেষ্টারা। যুদ্ধবিরতি সম্মতে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের রাজি করাতে এই দুজন একবার কাতার, একবার মিসর তো একবার যুক্তরাষ্ট্র ছুটেছেন।

Play Video

যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় নেতৃত্ব দেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা ব্রেট ম্যাকগার্ক। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা সব পক্ষকে এক টেবিলে বসাতে সাহায্য করেছে। আর কাতারের হয়ে আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি। তিনিই জানান, রোববার থেকে এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।

ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেছেন মিসরের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হাসান রাসাদ। মিসর মূলত ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের যোদ্ধাদের সঙ্গে সমঝোতার খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করেছে। সামনের দিনগুলোতে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। ইয়াহহিয়া সিনাওয়ারের মৃত্যুর কারণে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন খলিল আল হায়া। তার দক্ষতার কারণে দ্রুত হয়েছে যুদ্ধবিরতির এই প্রক্রিয়া।

প্রাথমিকভাবে ৪২ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন। চুক্তির আওতায় ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে শতাধিক ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে ছেড়ে দেওয়া হবে। গাজার জনবহুল এলাকা থেকে সরে যাবে ইসরায়েলি সেনারা। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা নিজ বাড়িতে ফিরতে পারবে। আর গাজার ভেতর ৮০০ মিটারের একটি বাফার জোন তৈরি করা হবে, যেটির নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসরায়েলের হাতে। কায়রোভিত্তিক একটি সংস্থার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করবে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র।

তবে এই যুদ্ধবিরতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে ইসরায়েলে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের কাছে এই যুদ্ধবিরতি পরাজয়ের শামিল। নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভায়ও ক্ষোভ দেখা গেছে। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন গাভির যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন। তবে যুদ্ধবিরতির পক্ষেও ইসরায়েলে মিছিল হয়েছে। ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি নির্বিশেষে বেশিরভাগ মানুষ চাইছে শান্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *