ঢাকা

দহগ্রামে বিএসএফের তৎপরতা, আতঙ্কে বাংলাদেশিরা

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা, বিশেষ করে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নে, বাংলাদেশিদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। শূন্যরেখার কাছাকাছি কাঁটাতারের বেড়া বসানোর মাধ্যমে পরিস্থিতি আরও উত্তেজিত হয়েছে।

Play Video

দহগ্রাম ইউনিয়নটি ভারতীয় ভূখণ্ডের মধ্যেই অবস্থিত এবং এখানকার প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য তিন বিঘা করিডোরই একমাত্র পথ, যার মাধ্যমে তারা ভারতে প্রবেশ ও বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারে। এই করিডোরটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকলেও, ৫ আগস্টের পর থেকে এর ব্যবহার নিয়ে নতুন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে, যা স্থানীয়দের জন্য অনেক বেশি সমস্যা সৃষ্টি করছে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ শূন্যরেখার পিলারের কাছ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া বসিয়েছে। সেই সঙ্গে নির্দিষ্ট দূরত্বে কাচের বোতলও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। সীমান্তে বিএসএফের সশস্ত্র টহলও জোরদার হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করেছে।

Play Video

সরকার পতনের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের পরিবর্তন স্পষ্টভাবে আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলেছে। বেড়া বসানোর পর থেকে আমরা মাঠে কাজ করতে যেতে পারছি না এবং বিএসএফ আমাদের হুমকি দিচ্ছে।
দহগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জানান, এটি নতুন কিছু নয়। তিনি বলেন, “আগে এমন কাঁটাতারের বেড়া ছিল না, তবে এখন পুরো এলাকায় বেড়া বসানো হচ্ছে। বিএসএফ দাবি করছে, এটি গবাদি পশুদের সীমান্তের অন্য দিকে চলে যাওয়ার জন্য বাধা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, কিন্তু স্থানীয়দের কাছে এটি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

Play Video

গবেষণা করে জানা গেছে, দহগ্রামে সরকার পাড়া গ্রামের মানুষও এই নতুন বেড়া বসানোর কারণে ব্যাপকভাবে আতঙ্কিত। সরকারের পাড়া গ্রামে বাসিন্দা ফজলুল ইসলাম জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে সীমান্তে আরও কড়াকড়ি বেড়েছে এবং তিনি তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানান, “সরকার পতনের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের পরিবর্তন স্পষ্টভাবে আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলেছে। বেড়া বসানোর পর থেকে আমরা মাঠে কাজ করতে যেতে পারছি না এবং বিএসএফ আমাদের হুমকি দিচ্ছে।”
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, শূন্যরেখার কাছাকাছি এই কাঁটাতারের বেড়া বসানোর কারণে কৃষি কাজ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, যিনি সীমান্ত এলাকার কৃষক, জানান, “বিএসএফ টাওয়ার থেকে এসে মাঝে মাঝে আমাদের কাজের স্থানেও হুমকি দেয়। রাতের আঁধারে উচ্চ ক্ষমতার আলোকিত বাতি ব্যবহার করে তারা পুরো সীমান্ত অঞ্চল উজ্জ্বল করে রাখে, যা আমাদের ফসলের জন্য ক্ষতিকর হচ্ছে।”

Play Video

গরু চোরাচালান একটি বড় সমস্যা হলেও, বিএসএফ এর গুলির হুমকি এবং চোরাচালানের অভিযোগে স্থানীয়রা আরও বেশী সমস্যায় পড়ছে। হাবিবুর রহমান নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “আমরা আমাদের গরু নিয়ে যেতেই পারি না। বিএসএফ বাধা দেয়, কখনও বন্দুক তাক করে গুলি করে দেওয়ার হুমকি দেয়। আমাদের গরু তো ঘরে পুষবো না!”

সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে এবং বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। সীমান্তে অপরাধ দমনে দুই বাহিনী একসঙ্গে কাজ করবে।
ভারতীয় হাইকমিশনার
২০১১ সালে তিন বিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলার জন্য চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু এখন ট্রাক এবং বাস প্রবেশে বাধা দেওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং কৃষকদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। মো. ওহিদুল ইসলাম, একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, আগে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করা সহজ ছিল, কিন্তু এখন আমাদের অনেক সময় অতিরিক্ত খরচ ও সময় ব্যয় করতে হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতির মাঝে, সম্প্রতি বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে পতাকা বৈঠকও হয়েছে, তবে সীমান্ত এলাকার মানুষের উদ্বেগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে তুলে ধরেছে।

ভারতের হাইকমিশনার জানান, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে এবং বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সীমান্তে অপরাধ দমনে দুই বাহিনী একসঙ্গে কাজ করবে।

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, ‘২০১০ সালের চুক্তি অনুযায়ী তিন বিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে, কিন্তু এখন সীমান্তে বেড়া বসানোর কারণে স্থানীয়দের সমস্যা বাড়ছে। দহগ্রামে ভারতীয় বাহিনী শূন্যরেখার উপর বেড়া বসাতে পারছে, যা বাংলাদেশের জন্য কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি করেছে।’ সূত্র: বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *