

রাজধানীর বাজারে শীতকালীন সবজিতে স্বস্তি দিলেও চড়া মাছ মাংসসহ নিত্যপণ্যের দাম। এতে বিপাকে নিম্ন-মধ্যবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষ। ব্যবসায়ীরা অবশ্য বলছেন, শীত মৌসুমে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন নিউমার্কেট, লালবাগ বউবাজার, ঝিগাতলা কাঁচাবাজার, কারওয়ান বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।
বিক্রেতারা বলছেন, মাছের বাজারে প্রতিদিনই ওঠানামা করে। কাঁচামাল আজকে দাম বাড়লে কাল কমে। নিউমার্কেট বাজারের মাছ বিক্রেতা আতাউর কালবেলাকে বলেন, মাছের দাম দুমাস আগে থেকেই বাড়তি। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২০ টাকা করে বেড়েছে। দেশি ও চাষের মাছের দাম প্রতি কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা করে ওঠানামা করছে। বেশি দামে কিনলে বেশিতেই বিক্রি করতে হয়।
বাজারে প্রতি কেজি পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, চাষের শিং ৫০০ থেকে ৫৫০, আকারভেদে চাষের পাঙ্গাশ ১৮০-২২০ টাকা, ১ কেজি ওজনের রুই ২৫০, ৪ থেকে ৫ কেজির রুই ৪৫০ টাকা এবং চাষের কৈ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকায়। আর আকারভেদে প্রতি কেজি কাতলা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা ও চিতল ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি দেশি শিং ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার এবং শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকার ওপরে। তবে ঝাটকার দাম ৫০০ টাকার মধ্যে।
মাংসের দামও ঊর্ধ্বমুখী বাজারে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬০০-৬৫০ টাকা। আর প্রতি পিস দেশি হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি খাসির মাংস বেড়েছে ৫০ টাকা। বর্তমান দাম ১২০০ টাকা। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। আর হাড়ছাড়া মাংস প্রতি কেজি ৯৫০ টাকা।
আলতাফ নামে এক রিকশাচালক বলেন, সারা বছর মাছ-মাংসের দাম বেশিই থাকে। ঈদ ছাড়া মাংস চোখেই দেখি না। এই আয় দিয়ে বড় মাছ বা গরুর মাংস কি না, সম্ভব না।
ফাহিম নামে এক ক্রেতা বলেন, সরকার দাম বেঁধে দিলেও সেই প্রভাব কখনো বাজারে পড়ে না। বাজার মনিটরিংয়ের অনেক অভাব রয়েছে। ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা গরুর মাংস হলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-আয়ের মানুষেরা খাবে কীভাবে?
মাংস বিক্রেতা তছলিম বলেন, বাজার থেকে গরু কিনে আনার পর প্রতি কেজির দাম পড়ে ৭৩৭ টাকা। তাহলে কত টাকা কেজি বিক্রি করব? এ ছাড়া দোকান ভাড়া ও যাতায়াত খরচও রয়েছে।
কারওয়ান বাজারের কৃষি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের মতো প্রতি কেজি মিনিকেট ও নাজির শাইল ৭৫ থেকে ৮০, আটাশ ৬০ থেকে ৬৫, বাসমতী ১০০ এবং পাইজাম ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে এই চাল নিউমার্কেট ও পাড়া মহল্লার খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা করে বেশি।
তবে শীতকালীন সবজিতে ভোক্তারা আছেন স্বস্তিতে। গত দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০, শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ২০ টাকা এবং শসা ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া শালগম ৪০, গাজর ৫০, প্রতি কেজি পেঁপে ২৫-৩০ টাকা, ঝিঙা-ধুন্দল ৭০ টাকা ও টমেটো ৫০ টাকা। আর পালংশাক, লালশাক ও পেঁয়াজের কালি প্রতি আটি ১০ টাকা। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ খুচরা বাজারে ৮০ টাকা আর পাইকারিতে ৫০ টাকা।
তবে অপরিবর্তিত রয়েছে আলু, পেঁয়াজ ও সয়াবিন তেলের দাম। প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৫৫, দেশি রসুন ২৫০ এবং ইন্ডিয়ান রসুন প্রতি কেজি ২২০ টাকা। চায়না আদা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং ক্যারোলা আদা ১২০ দরে বিক্রি হচ্ছে। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১৮৫, খোলা পামতেল ও সুপার প্রতি কেজি ১৭৫ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন ৫ লিটার ৮৪০ থেকে ৮৫০ এবং ১ লিটার ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।