

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালী করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। এই আইন বাস্তবায়ন করতে সরকার বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকপণ্যের উপর শক্তিশালী আইন প্রণয়নের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্টি টোবাকো ক্লাব এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের স্মারকলিপি প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে তামাকপণ্যে ব্যবহারের ফলে মৃত্যুহার এতো বেশি যা আসলেই দুঃখজনক। বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে যে কর আদায় হয় তা ঝালাই করে মানুষের স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। আমরা তামাকপণ্যের কর পেয়ে থাকি প্রতি বছর ২২ হাজার কোটি টাকা, যা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত তামাকপণ্যে ব্যবহারের ফলে প্রতি বছর স্বাস্থ্য খাতে সরকারের খরচ হয় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা আমাদের অজানা। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালী করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে এবং এই আইন বাস্তবায়ন করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাক্সিন অ্যান্ড ইনিশিয়েটিভের (গ্যাভী) নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, তামাক সেবনের ফলে প্রতিবছর ৮ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটে। এর মধ্যে সরাসরি তামাক ব্যবহারের কারণে মারা যায় ৭১ লাখ মানুষ এবং পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মারা যায় প্রায় ৯ লাখ মানুষ। অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৩-১৫ বছরের শিশুদের মধ্যে (গ্লোবাল ইয়ুথ ট্যোবাকো সার্ভে-২০১৩) শতকরা ৬ দশমিক ৯ শতাংশ কোন না কোন ধরনের তামাক ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা শতকরা ৯.২ শতাংশ এবং মেয়েদের সংখ্যা শতকরা ২.৮ শতাংশ। অতি দ্রুত সময়ে তামাকপণ্যের আইন পাস করার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, তামাক আইন পাস করা হলে প্রায় ১৬ লাখ অকাল মৃত্যু রোধ করা যাবে। প্রায় ১৬ লাখ তরুণকে ধূমপান শুরু করা থেকে বিরত রাখা যাবে এবং প্রায় ২৩ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে। তাই অনতিবিলম্বে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে বাস্তবায়ন করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
এদিকে স্মারকলিপি প্রদানকালে জানানো হয়, বাংলাদেশের প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩৫.৩ শতাংশ মানুষ তামাক ও তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করে থাকে। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে (টোব্যাকো অ্যাটলাস ২০২০)। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের আর্থিক ক্ষতি (চিকিৎসা ব্যয় ও উৎপাদনশীলতা হারানোসহ) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা (বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, ২০১৮)। সার্বিকভাবে তামাক ব্যবহারের এই চিত্র বিপজ্জনক। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করে আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটিকে সংশোধন করা অত্যন্ত জরুরি।সাক্ষাৎকালে আরও বলা হয়, তামাকপণ্যের বিনিময়ে যেই সার্চ চার্জ পাওয়া যায় তা একেবারেই যথেষ্ট নয়। তার পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাস হলে, অন্যান্য রোগের খরচ কমে যাবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরো শক্তিশালী করা লক্ষ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়, যা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে WHO FCTC উন্নীত করতে সহায়তা করবে। এগুলো হলো:
১. ধারা ৪ এবং ৭ বিলুপ্ত করা: পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান (DSA) নিয়ে যে বিধান রয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা,
২. পয়েন্ট অব সেলস -এ তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা,
৩. তামাক কোম্পানির CSR কর্মসূচি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা,
৪. ই-সিগারেট ও টোব্যাকো প্রোডাক্টস-সহ সকল ইমার্জিং তামাক পণ্য নিষিদ্ধ করা, (ইতোমধ্যে ই-সিগারেট বন্ধে পরিপত্র জারি করা হয়েছে),
৫. তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট বা কৌটায় স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা এবং সচিত্র সতর্কতা যুক্ত করা,
৬. বিড়ি ও সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারীর সাথে সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রোজেক্ট ম্যানেজার ডা. মো. স্বাক্ষর রহমান এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অ্যান্টি টোব্যাকো ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মো. মাসুম বিল্লাহ।