শিক্ষা

রাবিতে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে আবারও কর্মবিরতি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে আবারও পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

Play Video

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের পাশে লিচু তলায় দিনব্যাপী এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
এ কর্মসূচিতে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরতি দেওয়া হয়েছে। ফলে সার্টিফিকেট উত্তোলনসহ অনেক ক্ষেত্রেই ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

Play Video

একই দাবিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবারও পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করার ঘোষণা দিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় বক্তারা বলেন, পোষ্য কোটা কোনো কোটা নয়, অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীরা যেমন সুবিধা পায়, এটা তেমনি একটি সুবিধা। তারা এটিকে প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার হিসেবে দেখছেন। তারা ১ শতাংশ নয়, ৫ শতাংশ কোটা বহাল চান। তাদের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।

Play Video

বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. মুক্তার হোসেন বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে আজ এই পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আলোচনায় আমরা বোঝাতে চেয়েছি, এটা কোনো কোটা নয়। অন্য সরকারি চাকরিজীবীরা যেমন সুবিধা পান, এটা তেমনই একটি সুবিধা। আমরাও অযৌক্তিক কোটার বিরুদ্ধে। তবে এই সুবিধাকে কোটা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই।

Play Video

আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন, আবাসিক হল এবং বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ অফিস কক্ষের তালা খোলা হয়নি। কিছু কিছু কক্ষের দরজা খোলা হলেও বন্ধ রয়েছে দাপ্তরিক কার্যক্রম। ফলে জরুরি কাজে মার্কশিট, সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে আসা শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মো. সজিব বলেন, আমার মাস্টার্স পরীক্ষার সনদ ও মার্কশিট উত্তোলনের জন্য এসেছি কিন্তু প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তা নিতে পারিনি। আমার মতো আরও অনেক শিক্ষার্থী এসে ফিরে যাচ্ছে। যৌক্তিক দাবিতে যে কেউ আন্দোলন করতে পারে। তবে আমাদের শিক্ষার্থীদের যেন দুর্ভোগ পোহাতে না হয়।

একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলামও সেবা না পেয়ে ফিরে গেছেন।

উল্লেখ্য, গত ১ জানুয়ারি রাবিতে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের জন্য বরাদ্দকৃত পোষ্য কোটার হার পুনর্নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর আগে, গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ৪ শতাংশ পোষ্য কোটা ছিল। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নতুন প্রশাসন সেই কোটা ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ করে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরপরই কয়েকজন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পোষ্য কোটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাতে ২০ সদস্যের একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে। তিন দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা থাকলেও প্রায় দেড় মাস পর এই নতুন সিদ্ধান্ত জানায় প্রশাসন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন শিক্ষার্থীরা। পোষ্য কোটা সার্বিকভাবে বাতিলসহ তিন দাবিতে ২ জানুয়ারি সকাল থেকে প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করেন তারা। এসময় শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে প্রায় ১২ ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলে প্রশাসন ভবনের তালা খুলে দেওয়া হয়।

এর প্রতিবাদে ও পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে গত ৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরেরদিন তারা দুই ঘণ্টা অবস্থান ধর্মঘট পালন এবং সর্বশেষ ৮ জানুয়ারি পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *