জাতীয়

রেমিট্যান্সে আরব আমিরাতকে পেছনে ফেলল যুক্তরাষ্ট্র

রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রেখে যাচ্ছেন প্রবাসীরা। সেই সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক ইতিবাচক পরিবর্তনেও সহায়তা করছেন। জুলাই বিপ্লবের সময় স্বৈরাচার সরকারকে উত্খাত করতে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স প্রেরণ ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেন, আবার অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর রেমিট্যান্স প্রেরণ বাড়িয়ে দেন তারা। এতে হাসিনার আমলে দুর্বল হয়ে পড়া দেশের অর্থনীতির ভীত আবার শক্তিশালী হতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, দেশে প্রবাসী আয় প্রেরণকারী দেশ হিসেবে টানা তিন মাস ধরে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে গেছে। তাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে (ইউএই) পেছনে ফেলে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় প্রেরণকারী দেশের তালিকায় উঠে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে প্রবাসী আয় আসা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এই তিন মাসের প্রবাসী আয় সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ১৪০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাত বা ইউএই থেকে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এই তিন মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ৯৯ কোটি ডলার। প্রবাসী আয় প্রেরণের দিক থেকে শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় এরপরে রয়েছে যথাক্রমে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, ইতালি, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৯ কোটি ৩৪ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। এরপর সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৯ কোটি ডলারে। এক মাসের ব্যবধানে দেশটি থেকে প্রবাসী আয়ে ৩৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়। অক্টোবরে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ কোটি ডলারে। সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয় ২৮ শতাংশের বেশি।

Play Video

নভেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫১ কোটি ১৯ লাখ ডলারে।
গত আগস্টেও দেশে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় প্রেরণকারী দেশ ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। ওই মাসে দেশটি থেকে প্রবাসী আয় এসেছিল ৩৪ কোটি ডলার, যা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ৫ কোটি ডলার বেশি। সেপ্টেম্বরে এসে প্রবাসী আয়ে ইউএইকে পেছনে ফেলে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সেপ্টেম্বরে ইউএই থেকে প্রবাসী আয় এসেছিল ৩৬ কোটি ডলার। একই মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসে ৩৯ কোটি ডলার। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রবাসী আয় কমে যায়। অক্টোবরে দেশটি থেকে আসে ৩৩ কোটি ডলার। নভেম্বরে যা আরও কমে ২৯ কোটি ডলারে নেমে আসে।
হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে একাধিক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী ও প্রবাসী আয় আহরণের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, প্রবাস আয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে একধরনের বড় পরিবর্তন হয়েছে। এখন প্রবাসী আয় প্রেরণকারী বৈশ্বিক বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দেশের ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রবাসী আয় কিনে নেয়। পরে সেসব আয় একত্র করে নির্দিষ্ট একটি দেশ থেকে তা গন্তব্য দেশে পাঠায়। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রামসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠান অ্যাগ্রিগেটেড (সমন্বিত) পদ্ধতিতে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে প্রেরণ করে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় আসার পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। কারণ, রেমিট্যান্স প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন দেশে প্রবাসী আয় প্রেরণ করছে। ফলে প্রবাসী আয়ের উৎস দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নাম নথিপত্রে লিপিবদ্ধ হচ্ছে।

Play Video

Play Video

Play Video

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *