

দক্ষিণ আফ্রিকার একটি পরিত্যক্ত সোনার খনিতে আটকা পড়া শ্রমিকদের ভয়াবহ এক ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। মাটির নিচে কয়েক মাস ধরে অবৈধ খনি শ্রমিকরা সেখানে বসবাস করছে বলে জানা গেছে। গত বছর দেশজুড়ে অবৈধ খনির বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে তারা সেখানে রয়েছেন।
খনি শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা মাইনিং অ্যাফেক্টেড কমিউনিটিস ইউনাইটেড ইন অ্যাকশন (ম্যাকুয়া) এ তথ্য জানিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার(১৪ জানুয়ারি) বিবিসি এই খবর প্রকাশ করেছে।
মাইনিং অ্যাফেক্টেড কমিউনিটিস ইউনাইটেড ইন অ্যাকশন (ম্যাকুয়া) গোষ্ঠীর মুখপাত্র সাবেলো মঙ্গুনি জানান, উদ্ধার করা কিছু শ্রমিকের সঙ্গে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে। সেই ফোনের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু মৃতদেহ একটি ব্যাগে মোড়ানো আবস্থায় রয়েছে। দ্বিতীয় ভিডিওতে কিছু খনি শ্রমিকের ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখা যাচ্ছে, তবে তারা এখনও জীবিত।
বিবিসি ভিডিওগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
গত সপ্তাহে আদালত সরকারকে যে উদ্ধার অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিল, তা সোমবার থেকে শুরু হওয়ার পর দ্বিতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে।
পরিত্যক্ত এই সোনার খনিটি দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী জোহানেসবার্গ থেকে ১৪০ কিলোমিটার (৯০ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে স্টিলফন্টেইনের কাছে অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে ‘বাফেলসফন্টেইন’ সোনার খনি নামে পরিচিত।
১০০ জনেরও বেশি অবৈধ খনি শ্রমিক মাটির নিচে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ মৃতের সংখ্যাটি নিশ্চিত করতে পারেনি। কারণ এই সংখ্যা এখনও কোনো সরকারি সূত্র যাচাই করেনি বলে একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খনিতে এখনও শত শত লোক আটকে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেনারেল ইন্ডাস্ট্রিজ ওয়ার্কার্স অফ সাউথ আফ্রিকা (গিউসা) নামে একটি ট্রেড ইউনিয়ন কর্তৃক প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বহু শার্টবিহীন পুরুষ নোংরা মেঝেতে বসে আছেন।
তাদের মুখ ঝাপসা করে দেওয়া হয়েছে। ক্যামেরার বাইরে একজন পুরুষ কণ্ঠস্বরকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমরা ক্ষুধার্ত এবং আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমরা তোমাদের মাটির নিচে মারা যাওয়া লোকদের মৃতদেহ দেখাচ্ছি। আর এখানেই সব নয়… তুমি কি দেখতে পাচ্ছো মানুষ কীভাবে সংগ্রাম করছে? দয়া করে আমাদের সাহায্য কর আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন।’ অন্য একটি ভিডিওতে একজন ব্যক্তি বলছেন, ‘মানুষ ক্ষুধার কারণে মারা যাচ্ছে।’ এরপর তিনি মৃতের সংখ্যা ৯৬ জন বলে দাবি করেন এবং সাহায্য, খাবারের জন্য অনুরোধ করেন। ফুটেজটি গত শনিবার ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনার খনিটি পরিত্যক্ত হওয়ায় সেখানে প্রবেশ অবৈধ ছিল। তাই গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে শ্রমিকেরা সেখান থেকে বের হতে চাচ্ছেন না বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাই খনি শ্রমিকদের খাদ্য ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে তাদেরকে জোর করে বের করে আনা যায়।
উদ্ধার প্রচেষ্টার নেতৃত্বদানকারী খনিজ সম্পদ বিভাগ বিবিসিকে জানিয়েছে, সোমবারের অভিযানে খনির মধ্যে একটি খাঁচা নামানো হয়। এরপর মানুষ বোঝাই করার পরে ওপরে তোলা হয়। এই কাঠামোটি ছয় বা সাতজনকে ধরে রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছে, যা তাদের ওজনের ওপর নির্ভর করে।
মাইনিং অ্যাফেক্টেড কমিউনিটিস ইউনাইটেড ইন অ্যাকশন (ম্যাকুয়া) গোষ্ঠীর মুখপাত্র সাবেলো মঙ্গুনি বলেন, এখন পর্যন্ত নয়টি মৃতদেহসহ ২৬ জন খনি শ্রমিককে জীবিত অবস্থায় তুলে আনা হয়েছে।’ অভিযানের আপডেট জানাতে আজ মঙ্গলবার পুলিশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি ব্রিফিং করবে।