জাতীয়

গণভবনে টিউলিপের প্রচারপত্র, গয়নাসহ যা যা পাওয়া গেল

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের প্রচারপত্র, লেবার পার্টির পোস্টার, নামী ব্র্যান্ডের শপিং ব্যাগ, দামি কলমের মোড়ক, বিদেশি বিশিষ্টজনদের উপহার দেওয়া পোশাক-গয়না, তৈজসপত্রসহ আরও নানা জিনিস পড়ে আছে গণভবনের এখানে-সেখানে।

Play Video

শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের অনুমতি নিয়ে গণভবনে প্রবেশ করে এসব দেখতে পেয়েছেন দ্য সানডে টাইমসের প্রতিবেদক।

Play Video

সংবাদমাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে শেখ হাসিনার সরকারি এই আবাসে কয়েক ডজন কক্ষ আছে এবং রয়েছে বিশাল বাগান ও পুকুর। এ পুকুরে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী মাছ ধরতেন।
তার বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি আর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় কয়েক শ মানুষকে হত্যার ঘটনায় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গণভবনে ধুলায় ঢেকে থাকা একটি রাজনৈতিক প্রচারপত্র পড়ে থাকতে দেখা গেল। এটা যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) টিউলিপের। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন তিনি।
টিউলিপ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। টিউলিপের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার আমলের দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।
পাশেই একটি মোড়ক পড়ে ছিল। সেটা সোনার প্রলেপ দেওয়া মন্টব্ল্যাঁ কলমের।
একেকটির দাম দেড় হাজার ডলার। সঙ্গে পড়ে ছিল হীরার মান যাচাইয়ের সনদ। যুক্তরাজ্যের এক বিশিষ্ট আইনজীবীর একটি আইনি পরামর্শের কপি সেখানে দেখা গেছে। আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমে হাসিনার আমল নিয়ে করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রকাশ আটকে দিতে আইনি পরামর্শ ছিল তাতে। বিদেশি ব্যাংকে হিসাব খোলার আবেদনপত্র পড়ে ছিল পাশেই।
শেখ হাসিনার বাবা ও বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক কূটনৈতিক তারবার্তার কপিও ধুলায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

Play Video

টিউলিপের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও কিছু জিনিস এখনো পরিত্যক্ত গণভবনে পড়ে আছে। এর মধ্যে একটি ‘ধন্যবাদ নোট’ দেখা গেছে। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হওয়ার পর নিজ এলাকা হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্নের লেবার পার্টির স্থানীয় সদস্যদের উদ্দেশে সেটা লেখা।

Play Video

আরেকটি ছিল টিউলিপের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন। জীবনমানের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চরম সংকটে পড়া মানুষের কল্যাণে টিউলিপ যা যা করেছিলেন, সেসব সম্পর্কে পাঠকদের পড়ার আহ্বান রয়েছে তাতে।

যদিও টিউলিপ বরাবরই দাবি করে এসেছেন, খালার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে তার কখনোই রাজনৈতিক বিষয়ে কথাবার্তা হতো না। ২০১৭ সালে তিনি বলেছিলেন, খালার সঙ্গে ‘কখনোই’ রাজনীতি নিয়ে কথা বলেননি তিনি।
একই বছর এক সাংবাদিকের পক্ষ থেকে টিউলিপের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করা এক আইনজীবীর ‘গুমের’ ঘটনায় শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কথা হয়েছে কি না। তখন টিউলিপ সন্তানসম্ভবা ওই সাংবাদিককে হুমকি দিয়েছিলেন। ওই সাংবাদিক পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন।

এর পর থেকে টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ সামনে আসে, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাজ্যে এমন তিনটি সম্পত্তিতে বসবাস করেছেন, যেগুলো শেখ হাসিনার শাসনামলের কর্মকর্তা ও সহযোগীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমসের অনুসন্ধানে জানানো হয়েছে, এর একটি কেনা হয়েছিল অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে। কর ফাঁকির আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে নিবন্ধিত ওই কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের দুই ব্যবসায়ীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আলোচিত পানামা পেপারসে ওই কম্পানির নাম এসেছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, টিউলিপের ব্যবহার করা সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি বেইডনক।

যদিও টিউলিপ বরাবর এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ পরিস্থিতিতে টিউলিপের ওপর ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সরকারের পূর্ণ আস্থা আছে, এটা বলতে গতকাল রবিবার যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানমন্ত্রী পিটার কাইলি অস্বীকৃতি জানান।

প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের কাজ চলছে বলে জানান অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা ও স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি জানান, ফ্যাসিবাদের বিপদ সম্পর্কে দেশ-বিদেশের মানুষকে সতর্ক করতে এটাকে জাদুঘর করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *