বাণিজ্য

সিগারেটে শুল্ক বৃদ্ধি : বাড়বে ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব

চলতি অর্থ বছরের মাঝে এসে সরকার সিগারেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক (এসডি) বাড়িয়েছে। এতে বাড়তি ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় হবে, কমবে ধূমপায়ীর সংখ্যা। তবে চলতি অর্থবছরের শুরুতে যদি এভাবে বাড়ানো হতো তাহলে আরো বেশি সুফল পাওয়া যেত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

Play Video

আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘উন্নয়ন সমন্বয়’।
সেখানে বিভিন্ন তামাক-বিরোধী নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, সহযোগী অধ্যাপক ড. সুজানা করিম, বাংলাদেশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড. নাজমুল ইসলাম, নিউজ২৪ টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি বাবু কামরুজ্জামান, সাবেক জাতীয় ফুটবলার কায়সার হামিদ, উন্নয়ন সমন্বয়ের হেড অব প্রোগ্রামস শাহীন উল আলম প্রমুখ।

Play Video

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে সিগারেটের খুচরা মূল্য বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সকল স্তরের সিগারেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে।
এর ফলে ধূমপানের হার যেমন কমবে, তেমনি সরকার বাড়তি রাজস্বও পাবে। তবে অর্থ বছরের শুরুতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া গেলে আরো বেশি সুফল পাওয়া যেত।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে তামাক ব্যাবহারকারীদের মধ্যে বাংলাদেশ ৫ম স্থানে রয়েছে।
এর প্রভাব হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মোট মৃত্যুর মধ্যে ২২ শতাংশ হয়েছে তামাকজনিত কারণে। আর তামাক বিক্রির ফলে যে রাজস্ব আয় হয় তা তামাকজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতির ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ, তামাক বিক্রি ও ব্যবহারের ফলে সরকারকে স্বাস্থ্য খাতে ভর্তুকি দিতে হয়। যা গ্রহণযোগ্য নয়। সিগারেটে কার্যকর করারোপ না করার ফলে সরকার প্রতি বছর ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।
চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি সিগারেটে যথাযথ করারোপের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাতে ৫ হাজার কোটি টাকার মতো বাড়তি রাজস্ব পাওয়া যাবে। তবে এমন উদ্যোগ অর্থবছরের শুরুতে নেওয়া হলে আরো প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব যোগ করা যেত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য-অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, ‘২০২৫ সালে এসে প্রথমবারের মতো নিম্নস্তরের সিগারেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে অন্য উচ্চতর স্তরের সিগারেটগুলোর সমান করা হয়েছে। যেহেতু কিশোর-তরুণরা মূলত নিম্নস্তরের সিগারেটই ব্যবহার করেন, তাই এই স্তরের সিগারেটের ওপর কর হার বাড়ানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে হবে। সিগারেটে কার্যকর করারোপের মাধ্যমে আসন্ন বছরে ধূমপানের হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি চলতি বছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরে ২০ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব পাওয়া সম্ভব।’

Play Video

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সহযোগী অধ্যাপক ড. সুজানা করিম বলেন, ‘বাজারে বিক্রি হওয়া সিগারেটের স্তর চারটি থেকে কমিয়ে তিনটি করা উচিত। এমনটি করা গেলে সিগারেট বিক্রি থেকে কর আহরণ সহজ হবে, একইসঙ্গে সিগারেট ব্যবহারের হারও কাঙ্ক্ষিত হারে কমানো সম্ভব হবে।’

Play Video

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, দেশে তামাকজনিত মৃত্যুর ৫ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হচ্ছে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে। অন্যদিকে, ২০২৫ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তামাক ব্যবহারের হার শতকরা ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আর এই ব্যবহারের হার কমাতে শুল্ক বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *