বিশ্ব / যুক্তরাষ্ট্র

লস অ্যাঞ্জেলসে দাবানলের সবশেষ পরিস্থিতি

ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস। পাঁচ দিন পার হয়ে গেলেও আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুনের কারণে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ৪০ হাজার একেররও বেশি এলাকা। আগুনের গ্রাসে পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়েছে অন্তত ১২ হাজার বাড়িঘর। উদ্বাস্তু হয়েছে এক লক্ষেরও বেশি মানুষ।

Play Video

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন শনিবার রাতে জানিয়েছে, বাতাস আরও তীব্র হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তর। সেক্ষেত্রে বাতাস বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আগুনও আরও তীব্র হতে পারে এবং আরও নতুন নতুন এলাকা গ্রাস করতে পারে।
দাবানলের সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, কয়েকটি জায়গায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনও অন্তত ছয়টি জায়গায় আগুন জ্বলছে। তার মধ্যে রয়েছে পালিসেডস, ইটন, কেনেথ, লিডিয়া, হার্স্ট এবং আর্চার। পালিসেডে আরও ১০০০ একরে নতুন করে দাবানলের আগুন ছড়িয়েছে। সেখানে ২২ হাজার একরেরও বেশি এলাকা পুড়ে গেছে। এখানে অন্তত পাঁচ হাজার বাড়ি আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেছে।

Play Video

পালিসেড প্রশাসন জানিয়েছে, ১১ শতাংশ আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে তীব্র বাতাস অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, দেড় লক্ষেরও বেশি মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এবং ৫৭ হাজারের বেশি বাড়িঘর আগুনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

Play Video

লস অ্যাঞ্জেলেস এবং আশপাশের অঞ্চলে ভয়াবহ দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকল কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই দাবানল ইতোমধ্যেই শহরের অন্যতম আকর্ষণীয় এবং অভিজাত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার হুমকি সৃষ্টি করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কানাডা এবং মেক্সিকো থেকে দমকল এবং আগুন নিয়ন্ত্রণের নানা সরঞ্জাম আনা হচ্ছে।

Play Video

গত পাঁচ দিনের অগ্নিকাণ্ডে লস অ্যাঞ্জেলেসের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। দূষণ মাত্রা ছাড়িয়েছে। খারাপ বাতাসের জন্য স্কুল-কলেজগুলি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বাসিন্দাদের মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমেরিকার জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী সপ্তাহের জন্যেও লস অ্যাঞ্জেলেস ও সংলগ্ন এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের সতর্কতা জারি করেছে।

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন এই এলাকায় আর্দ্রতা কম থাকবে। শুষ্ক ও উষ্ণ হাওয়া চলমান থাকবে। বাতাসের সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। এমন আবহাওয়ার সম্ভাবনায় নতুন দাবানলের জন্য প্রস্তুতি রাখারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গত মঙ্গলবার ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে আগুনের সূত্রপাত হয়। ভিন্ন ভিন্ন ৫টি এলাকায় দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। পরে আরও একটি জায়গায় আগুন দেখা যায়। স্থানীয় সময় শনিবার রাত পর্যন্ত পাঁচ স্থানে দাবানল সক্রিয়ভাবে জ্বলছিল। এর মধ্যে দুটি দাবানল লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের একেবারে গায়ে হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ধ্বংসের কারণ হয়েছে। এ দুটি দাবানল শহরের বাড়িঘরে ছড়িয়ে পড়ে।

কেন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দাবানল:

লস অ্যাঞ্জেলেসে গত কয়েক দশক ধরে খরা, এরপর সাম্প্রতিক বছরগুলো ভারী বৃষ্টিপাত, পরে শরৎ ও শীতকালের শুষ্ক পরিস্থিতিতে ফিরে আসা সবই আগুনের জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে। শক্তিশালী স্যান্টা আনা বাতাস গাছপালাগুলো শুকিয়ে ফেলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে দিয়েছে। স্যান্ট আনা বাতাস হলো শক্তিশালী, শীতল, শুষ্ক, ঝড়ো বাতাস যাকে কখনো কখনো ডেভিল উইন্ডসও বলা হয়।

এই উচ্চ-চাপ বায়ু যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলের গ্রেট বেসিন এলাকা যা মূলত নেভাডা, ইউটাহ, আইডাহো ও দক্ষিণ-পূর্ব ওরেগনের উসর মরুভূমি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয় এবং ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে প্রবাহিত হয়। দাবানলের মধ্যেই তীব্র এই বাতাস আগুনকে দ্রুত ছড়িয়ে দেয়।

এ ছাড়াও আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য সরঞ্জাম ও জনবল সংকটকে দায়ি করছেন অনেকে। বলা হচ্ছে, স্থানীয় সংস্থাগুলো তাদের সীমিত সরঞ্জাম নিয়ে বিশাল ও দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়া দাবানল ঠেকাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার চিফ বুধবার বলেছেন, এই দাবানল মোকাবিলার মতো যথেষ্ট দমকলকর্মী তাদের নেই। লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তাগুলোয় সাধারণ দিনেও যানজট থাকে। ফলে যখন সবাই ভূমিকম্প বা দাবানলের সময় পালানোর চেষ্টা করে তখন একেবারে অন্যরকম পরিস্থিতি দেখা দেয়। একারণে, দমকল কর্মীরাও মুক্তভাবে কাজ করতে পারেননি।

এছাড়াও এই এলাকার ভৌগোলিক গঠনকে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পেছনে কারণ হিসেবে কাজ করছে বলেও মনে করছেন কেঁউকেঁউ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *