
৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক সাময়িকভাবে ২১৬৩ জন প্রার্থীকে মনোনীত করে গত বছরের ২৫ জানুয়ারি সুপারিশ করা হয়। এরপর ২০৬৪ জনকে নিয়োগ দিয়ে ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
তবে, পরবর্তীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত বছরের ১৫ অক্টোবর তারিখের প্রজ্ঞাপনটি বাতিলপূর্বক ১৮৯৬ জন প্রার্থীর অনুকূলে গত ৩০ ডিসেম্বর নিয়োগ প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। এক্ষেত্রে ২৫ জানুয়ারি সাময়িকভাবে মনোনীত ২১৬৩ জন প্রার্থীর মধ্যে নানা ধাপে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিবেচনায় সাময়িকভাবে অনুপযুক্ত ২২৭ জনসহ মোট ২৬৭ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ৯ জানুয়ারি তারিখে প্রকাশিত একটি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ২৬৭ জন কর্মকর্তাকে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করে দাবি করা হয়েছে যে, ৪৩ তম বিসিএসে বাদ পড়া ২৬৭ জনকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
তবে রিউমর স্ক্যানার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাদ পড়া ২৬৭ জন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ৯ জানুয়ারি তারিখে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে ৪৩ তম বিসিএসে বাদ পড়া ২৬৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি বরং গত ৩০ ডিসেম্বর তারিখে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্তদের শিক্ষানবিশ সহকারী কমিশনার হিসেবে যথোপযুক্ত পদে পদায়নের জন্য বিভাগীয় কমিশনারদের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে বাদ পড়া সেই ২৬৭ জনের বিষয়ে এখনও নিয়োগের কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
এতে আরো বলা হয়, আলোচিত দাবির বিষয়ে অনুসন্ধানে গত ৯ জানুয়ারি তারিখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনটি থেকে জানা যায়, ‘৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের ২৫/০১/২০২৪ তারিখের ৮০,০০,০০০০,২০২,৬৪.০১৯,২৩-২১ নম্বর পত্রের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নবনিয়োগ শাখার ৩০/১২/২০২৪ তারিখের ০৫.০০.০০০০.১৪৭.১১.০০৩.২৪-৪০৭ নম্বর প্রজ্ঞাপনমূলে ২৬৭ (দুইশত সাতষট্টি) জন কর্মকর্তাকে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনারবৃন্দের চাকরি শিক্ষানবিশ সহকারী কমিশনার হিসেবে যথোপযুক্ত পদে পদায়নের জন্য তাঁদের নামের পাশে বর্ণিত বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে ন্যস্ত করা হলো:….” অর্থাৎ, গত ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে নিয়োগপ্রাপ্তদের গত ৯ জানুয়ারির প্রজ্ঞাপনে নানা বিভাগে পদায়ন করা হয়েছে। ওই তালিকায় নিয়োগপ্রাপ্তদের নাম ও মেধাক্রমেরও উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে গত ৯ জানুয়ারি তারিখে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে পদায়নের জন্য উল্লেখকৃত কর্মকর্তাদের নাম ও মেধাক্রমের সাথে গত ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তদের নাম ও মেধাক্রমের তুলনা করে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম। তুলনাটিতে দেখা যায়, গত ৯ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে পদায়নের জন্য উল্লেখকৃত কর্মকর্তাদের নাম ও মেধাক্রম গত ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকায় হুবহু বিদ্যমান। উল্লেখ্য যে, গত ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে ২৬৭ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছিল।
এদিকে, ২০২৪ সালের ২৫ জানুয়ারিতে সাময়িকভাবে মনোনীত ২১৬৩ জন প্রার্থীদের মধ্য থেকে, সর্বশেষ গত ৩০ ডিসেম্বরের নিয়োগ প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া ২৬৭ জনের মধ্যে সাময়িকভাবে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত ২২৭ জন প্রার্থীর যেকেউ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ সকলের জন্য উন্মুক্ত আছে জানিয়ে চলতি বছরের গত ২ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, ‘৪৩তম বিসিএস থেকে বাদ পড়া ২৬৭ জনের বিষয়ে সরকার এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
যে প্রজ্ঞাপনের কথা বলা হচ্ছে, সেটি আগে থেকেই যারা গেজেটভুক্ত ছিলেন, তাদের পদায়ন সংক্রান্ত।’
তাছাড়া, গত ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে নিয়োগের জন্য জায়গা পাওয়ার পর গত ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে জায়গা হারানো বা বাদ যাওয়াদের একটি তালিকা তৈরি করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। বাদ যাওয়া সেসব প্রার্থীদের নাম গত ৯ জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে শিক্ষানবিশ সহকারী কমিশনার হিসেবে পোস্টিং হওয়া সেসব কর্মকর্তাদের নামের মধ্যে পাওয়া যায়নি। যা থেকে বুঝা যায়, গত ৯ জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনটিতে বাদ যাওয়া ২৬৭ জনকে পদায়ন করা হয়নি বরং ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে নিয়োগের জন্য উপযুক্ত হিসেবে নাম আসা কর্মকর্তাদেরই নানা বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া, বাদ যাওয়া ২৬৭ জনের মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জনকে ইতিমধ্যেই চূড়ান্তভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিবেচনায় সাময়িকভাবে অনুপযুক্ত ২২৭ জনের কেউ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তাদেরকে পুনর্বিবেচনা করা হবে। অর্থাৎ, বাদ যাওয়া ২৬৭ জনের মধ্যে সবার নিয়োগ পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সবকিছু ঠিক থাকলে সর্বোচ্চ ২২৭ জন নিয়োগ পেতে পারেন।
সুতরাং, গত ৩০ ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্তদের পদায়নের জন্য গত ৯ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনকে বাদ যাওয়া ২৬৭ জনের পদায়নের প্রজ্ঞাপন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।