
কেয়ামতের আগে পৃথিবীব্যাপী বেশ কিছু আলামত প্রকাশের কথা বলা হয়েছে হাদিসে। ছোট আলামতগুলোর মধ্যে আরবের মরুভূমি সম্পর্কে কিছু বর্ণনা রয়েছে। এমন একটি বর্ণনা হলো- আরবের মরু অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টি বেড়ে যাবে। বন্যার কবলে পড়ে বিপর্যস্ত হবে আরব অঞ্চল। পানির ছোঁয়ায় শুষ্ক মরুভূমি পরিণত হবে সবুজ অরণ্যে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে না যে পর্যন্ত সম্পদের প্রাচুর্য না আসবে। এমনকি কোনো ব্যক্তি সম্পদের জাকাত নিয়ে ঘুরবে কিন্তু নেওয়ার মতো লোক পাবে না। আরবের মাঠ-ঘাট তখন চারণভূমি ও নদী-নালায় পরিণত হবে।’ (সহিহ মুসলিম: ২২২৯)
হাদিস বিশারদদের মতে, এই হাদিস দ্বারা শুধু বর্তমান সৌদি রাষ্ট্র উদ্দেশ্য নয়। কোরআন-হাদিসের ভাষায় আরব বলতে গোটা আরব উপদ্বীপকে বোঝায়। এই উপদ্বীপে রয়েছে বর্তমান সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন ও ওমান।
ইতোমধ্যে এরকম একাধিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে সৌদি আরব। যাকে নবীজির ভবিষ্যদ্বাণীরই প্রতিফলন বলে ধারণা করছেন বিশিষ্ট আলেমরা। তাদের মতে, কেয়ামত কাছে চলে আসছে, তাই আরবের আবহাওয়ার এতো পরিবর্তন এবং এতে করে আরবের মরুভূমি নবীজির কথানুযায়ী আরও উর্বর হবে, চাষাবাদের উপযুক্ত হয়ে উঠবে, গাছপালায় ভরে যাবে। এসব কথাই হাদিসে বলে গেছেন আমাদের নবীজি।
হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনানুযায়ী, কেয়ামতের বড় আলামতগুলো হলো- ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশ, মিথ্যুক দাজ্জালের আবির্ভাব, ঈসা (আ.) এর আগমন, ইয়াজুজ-মাজুজের আত্মপ্রকাশ, পূর্ব-পশ্চিম ও আরব অঞ্চলে বড় ধরণের তিনটি ভূমিধ্বস, বিশাল ধোঁয়া, পশ্চিম গগণে সূর্যোদয়, অদ্ভুত জন্তুর প্রকাশ, ইয়েমেন থেকে আগুন বের হয়ে মানুষকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
আর ছোট আলামগুলোর মধ্যে রয়েছে মানুষের ধন-সম্পদ বেড়ে যাবে ফলে জাকাত খাওয়ার লোক থাকবে না, নানারকম গোলযোগ (ফিতনা) সৃষ্টি হওয়া, আমানতদারিতা না-থাকা, ইলম উঠিয়ে নেওয়া ও অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করা, সুদ-ব্যভিচার-মদ-বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপকতা, রাখাল শ্রেণির অট্টালিকা নির্মাণ, কৃতদাসী কর্তৃক স্বীয় মনিবকে প্রসব, মা-বাবার অবাধ্যতা, হত্যা, বেশি ভূমিকম্প হওয়া, মানুষের আকৃতি রূপান্তর, আকাশ থেকে পাথর পড়া, মুমিনের স্বপ্ন সত্য হওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য বেড়ে যাওয়া, নারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, আরব ভূখণ্ড তৃণভূমি ও নদনদীতে ভরে যাওয়া, ফোরাত (ইউফ্রেটিস) নদীতে স্বর্ণের পাহাড় প্রকাশ পাওয়া, হিংস্র জীবজন্তু ও জড় পদার্থ মানুষের সঙ্গে কথা বলা ইত্যাদি।
তবে, কেয়ামত কবে হবে—এ সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই। কারণ এ জ্ঞান শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, কেয়ামতের জ্ঞান কেবল তাঁরই জানা। তাঁর জ্ঞানের বাইরে কোনো ফল আবরণমুক্ত হয় না এবং কোনো নারী সন্তান প্রসব ও গর্ভধারণ করে না। (সুরা হা-মিম-সাজদা: ৪৭)
তাই বলে কেয়ামত অনেক দূরে ভাবার কারণ নেই। অবহেলায় সময় নষ্ট করা বোকামি হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা শুধু এই অপেক্ষাই করছে যে, কেয়ামত অকস্মাৎ তাদের কাছে এসে পড়ুক। বস্তুত কেয়ামতের লক্ষণসমূহ তো এসেই পড়েছে। সুতরাং কেয়ামত এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে?’ (সুরা মুহাম্মদ: ১৮)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি নেক আমলের মাধ্যমে কেয়ামতের প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।