১২:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মায়ের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি যে কারণে

মা মধুময় একটি শব্দ। মায়ের চেয়ে বেশি সদ্ব্যবহারের যোগ্য কেউ নেই। সন্তানের জন্য মা যে কষ্ট করেন, সে তুলনায় সন্তানের সারাজীবনের খেদমত ও ভালোবাসা নগণ্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভধারণ করে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার শুকরিয়া ও তোমার মা-বাবার শুকরিয়া আদায় করো।’ (সুরা লোকমান: ১৪)
এক লোক নবী (স.)-কে জিজ্ঞেস করলেন- হে আল্লাহর রাসুল আমার কাছে কে উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি অধিকার রাখে? তিনি বললেন- ’তোমার মা।’ লোকটি বললেন, তারপর কে? তিনি বললেন- ‘তোমার মা।’ তিনি আবারও বললেন, তারপর কে? তিনি বললেন- ‘তোমার মা।’ লোকটি বললেন, তারপর কে? তিনি বললেন- ‘তারপর তোমার বাবা।’ (বুখারি: ৫৬২৬)
সন্তান জন্মের পর দুই বছর নিজের সব আরাম-আয়েশ ও ঘুম বিসর্জন দিয়ে সন্তানের আরাম ও কল্যাণার্থে সবকিছু করেন একজন মা। সন্তানের প্রাথমিক জীবন মায়ের কোলে কাটে। মায়ের কোলকে সন্তানের প্রথম বিদ্যাপীঠ বলা হয়ে থাকে। সন্তানের মাঝে মায়ের সুন্দর ও উত্তম গুণের বিকাশ ঘটে থাকে।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, কোরআন-সুন্নাহয় বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; অথচ এর কারণস্বরূপ শুধু সেসব কষ্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা কেবল মায়েরাই সহ্য করে থাকেন। এ কারণেই সন্তানের ওপর মায়ের বিরাট অধিকারের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

ইসলামে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা সবচেয়ে বড় অপরাধ; এরপরের অপরাধ হলো মাকে কষ্ট দেওয়া ও মায়ের অবাধ্য হওয়া। আল্লাহ তাআলা নিজের অধিকারের পাশেই উল্লেখ করেছেন মা-বাবার অধিকারের কথা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন, তাকে ছাড়া অন্যকারো ইবাদত করো না এবং মাতাপিতার সঙ্গে সদাচরণ করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। তাদের সঙ্গে আদবের সঙ্গে কথা বলো।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৩)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী, বলে দিন!) এসো, তোমাদের ওপর তোমাদের রব যা হারাম করেছেন, তা পাঠ করি- তোমরা তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না এবং মা-বাবার প্রতি অনুগ্রহ করবে।’ (সুরা আনআম: ১৫২)

এক হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা মায়ের অবাধ্য হওয়াকে তোমাদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’ (মুসলিম: ৪৫৮০)
সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো- অতি আদরের সঙ্গে বাবা-মায়ের প্রতি সদাচরণ- খাদ্য, পানীয়, বাসস্থান, পোশাক ও জীবন ধারনের অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো। বিশেষ করে, তারা যখন যে জিনিসের অভাব বা প্রয়োজন বোধ করেন, তখন সে জিনিসের ব্যবস্থা করা। একবার রাসুল (স.) বললেন, ‘সে দুর্ভাগা! সে দুর্ভাগা! সে দুর্ভাগা!’ উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘সে কে?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি মাতাপিতা উভয়কে অথবা যেকোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েও (তাদের সেবা করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না।’ (মুসলিম: ৬২৭৯)

মায়ের সেবা করা, মায়ের যত্ন নেওয়া এবং মাকে খুশি করার গুরুত্ব বোঝাতে রাসুল (স.) আরেক হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘জান্নাত মায়ের পদতলে।’ (কানজুল উম্মাল: ৪৫৪৩৯)
মায়ের জন্য দোয়া করার শিক্ষা রয়েছে পবিত্র কোরআনে। এক্ষেত্রে বেশি বেশি এই দোয়াটি করবেন—رَّبِّ ارۡحَمۡهُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا ‘হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুন; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা আল-ইসরা: ২৪)। দোয়া করার পাশাপাশি মায়ের দোয়া চাওয়ারও শিক্ষা দেয় ইসলাম। কেননা আল্লাহ তাআলা সন্তানের জন্য মায়ের দোয়া কবুল করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তিনটি দোয়া অবশ্যই কবুল হয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ১. মজলুম বা নির্যাতিতের দোয়া, ২. মুসাফিরের দোয়া এবং ৩. সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৩২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বাবা-মায়ের মর্যাদা বোঝার তাওফিক দান করুন। বাবা-মায়ের যত্ন ও খেদমতে নিয়োজিত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ট্যাগ

মায়ের মর্যাদা সবচেয়ে বেশি যে কারণে

আপডেট সময়ঃ ০৮:৩৬:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫

মা মধুময় একটি শব্দ। মায়ের চেয়ে বেশি সদ্ব্যবহারের যোগ্য কেউ নেই। সন্তানের জন্য মা যে কষ্ট করেন, সে তুলনায় সন্তানের সারাজীবনের খেদমত ও ভালোবাসা নগণ্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভধারণ করে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার শুকরিয়া ও তোমার মা-বাবার শুকরিয়া আদায় করো।’ (সুরা লোকমান: ১৪)
এক লোক নবী (স.)-কে জিজ্ঞেস করলেন- হে আল্লাহর রাসুল আমার কাছে কে উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি অধিকার রাখে? তিনি বললেন- ’তোমার মা।’ লোকটি বললেন, তারপর কে? তিনি বললেন- ‘তোমার মা।’ তিনি আবারও বললেন, তারপর কে? তিনি বললেন- ‘তোমার মা।’ লোকটি বললেন, তারপর কে? তিনি বললেন- ‘তারপর তোমার বাবা।’ (বুখারি: ৫৬২৬)
সন্তান জন্মের পর দুই বছর নিজের সব আরাম-আয়েশ ও ঘুম বিসর্জন দিয়ে সন্তানের আরাম ও কল্যাণার্থে সবকিছু করেন একজন মা। সন্তানের প্রাথমিক জীবন মায়ের কোলে কাটে। মায়ের কোলকে সন্তানের প্রথম বিদ্যাপীঠ বলা হয়ে থাকে। সন্তানের মাঝে মায়ের সুন্দর ও উত্তম গুণের বিকাশ ঘটে থাকে।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, কোরআন-সুন্নাহয় বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; অথচ এর কারণস্বরূপ শুধু সেসব কষ্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা কেবল মায়েরাই সহ্য করে থাকেন। এ কারণেই সন্তানের ওপর মায়ের বিরাট অধিকারের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

ইসলামে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা সবচেয়ে বড় অপরাধ; এরপরের অপরাধ হলো মাকে কষ্ট দেওয়া ও মায়ের অবাধ্য হওয়া। আল্লাহ তাআলা নিজের অধিকারের পাশেই উল্লেখ করেছেন মা-বাবার অধিকারের কথা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন, তাকে ছাড়া অন্যকারো ইবাদত করো না এবং মাতাপিতার সঙ্গে সদাচরণ করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। তাদের সঙ্গে আদবের সঙ্গে কথা বলো।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৩)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী, বলে দিন!) এসো, তোমাদের ওপর তোমাদের রব যা হারাম করেছেন, তা পাঠ করি- তোমরা তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না এবং মা-বাবার প্রতি অনুগ্রহ করবে।’ (সুরা আনআম: ১৫২)

এক হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা মায়ের অবাধ্য হওয়াকে তোমাদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’ (মুসলিম: ৪৫৮০)
সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো- অতি আদরের সঙ্গে বাবা-মায়ের প্রতি সদাচরণ- খাদ্য, পানীয়, বাসস্থান, পোশাক ও জীবন ধারনের অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো। বিশেষ করে, তারা যখন যে জিনিসের অভাব বা প্রয়োজন বোধ করেন, তখন সে জিনিসের ব্যবস্থা করা। একবার রাসুল (স.) বললেন, ‘সে দুর্ভাগা! সে দুর্ভাগা! সে দুর্ভাগা!’ উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘সে কে?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি মাতাপিতা উভয়কে অথবা যেকোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েও (তাদের সেবা করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না।’ (মুসলিম: ৬২৭৯)

মায়ের সেবা করা, মায়ের যত্ন নেওয়া এবং মাকে খুশি করার গুরুত্ব বোঝাতে রাসুল (স.) আরেক হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘জান্নাত মায়ের পদতলে।’ (কানজুল উম্মাল: ৪৫৪৩৯)
মায়ের জন্য দোয়া করার শিক্ষা রয়েছে পবিত্র কোরআনে। এক্ষেত্রে বেশি বেশি এই দোয়াটি করবেন—رَّبِّ ارۡحَمۡهُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیۡ صَغِیۡرًا ‘হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুন; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা আল-ইসরা: ২৪)। দোয়া করার পাশাপাশি মায়ের দোয়া চাওয়ারও শিক্ষা দেয় ইসলাম। কেননা আল্লাহ তাআলা সন্তানের জন্য মায়ের দোয়া কবুল করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তিনটি দোয়া অবশ্যই কবুল হয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ১. মজলুম বা নির্যাতিতের দোয়া, ২. মুসাফিরের দোয়া এবং ৩. সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া।’ (আদাবুল মুফরাদ: ৩২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বাবা-মায়ের মর্যাদা বোঝার তাওফিক দান করুন। বাবা-মায়ের যত্ন ও খেদমতে নিয়োজিত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।