বাণিজ্য

গ্যাস দেন, আমরা বৈদেশিক মুদ্রা দেব : জ্বালানি উপদেষ্টাকে এ কে আজাদ

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি, হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেছেন, ‘জ্বালানি সংকটে অনেক কারখানা রুগণ হয়ে যাচ্ছে। আমরা ব্যবসা টেকাতে পারছি না। আমাদের গ্যাস দেন, আমরা বৈদেশিক মুদ্রা দেব। ডিজেল দিয়ে উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব নয়।
সরকার যদি শিল্পাঞ্চলগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ায়, তাহলে কর্মসংস্থান বাড়াবে, রাজস্ব আয় বাড়বে।’
সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ওই সেমিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)।
অনুষ্ঠানে এ কে আজাদ বলেন, ‘কিছুদিন আগে এক ব্যবসায়ী তার ছেলের সঙ্গে এসেছিলেন।

উনি তার টেক্সটাইল কারখানা আংশিক বন্ধ করে দিয়েছেন। মাগরিব নামাজের সময় আমার ডান পাশে ছিলেন। সিজদায় গিয়ে হু হু করে কান্না। উনি আসলে গ্যাসের চাপ পাচ্ছিলেন না।
কারখানা চালতে না পেরে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংকের টাকা দিতে পারছেন না। নরসিংদী এলাকায় অনেক কারখানা রুগণ হয়ে যাচ্ছে জ্বালানি সংকটে। আবার আমরা অনেকে কারখানা চালাতে পারছি না। কারণ যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে তাদের শ্রমিকরা এসে ভাঙচুর করছে, চাকরি চায়।
আমরা তাদের কিভাবে চাকরি দেব, আমরাই তো কারখানা চালাতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘জ্বালানি উপদেষ্টার (শেখ বশিরউদ্দীন) কাছে কয়েক দিন আগে গিয়েছিলাম। উনি ব্যাপারটা বোঝেন, তিনি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন। এখন একটু ভালো অবস্থায়, তবে এভাবে গ্যাস পেলে উৎপাদন চালিয়ে নিতে পারব, কিন্তু টিকে থাকতে পারব না। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। জ্বালানির দাম বাড়ছে, শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে হচ্ছে। আমি ইনক্রিমেন্ট ১০ শতাংশের কম দিতে পারছি না। যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে না। বরং তারা কমাচ্ছে। পাকিস্তানের ডিমুলেশনের কারণে ১ ডলারের পেছনে ২৮৭ রুপি পায়। আর আমি পাই ১২০ টাকা। এ কারণে পাকিস্তান আমার চেয়ে অর্ধেক মূল্যে পণ্য দিতে পারছে। আমাদের রপ্তানি যেখানে নেতিবাচক সেখানে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ভালো। আমাদের ৭ শতাংশ রপ্তানি নেগেটিভ। পাকিস্তান ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি গ্রোথ।’
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি বলেন, ‘ভারতের ৬টা প্রদেশে বিনিয়োগকারীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে যদি কোনো মহিলাকে চাকরি দেওয়া হয় তাহলে সরকার তাকে ৫ বছরে ৬ হাজার রুপি দিবে তাকে। ছেলেকে চাকরি দিলে সরকার তাকে ৫ হাজার ‍রুপি দেবে। ফলে বিনিয়োগকারীরা সেখানে ছুটছে। আমরা ব্যবসা টেকাতে পারছি না।’
জ্বালানি উপদেষ্টার উদ্দেশে এ কে আজাদ বলেন, ‘আমাদের গ্যাস দেন, আমরা বৈদেশিক মুদ্রা দেব। আমি যুক্তরাষ্ট্রের কটন সামিট থেকে ফিরলাম। সেখানে একজন অর্থনীতিবিদ দেখালেন চীনের ওপর যেভাবে কর আরোপ করা হচ্ছে তাতে আমদানিকারকরা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম এসব দেশে আসছে। কিন্তু আমরা অর্ডারগুলো সেভাবে নিতে পারছি না। কারণ যেগুলো অর্ডার নেওয়া আছে সেগুলোই সময় মতো অর্ডার সরবরাহ করতে পারছি না। আমি ডিজেল দিয়ে কারখানা চালিয়ে অর্ডার সরবরাহ করতে পারব না। এক একটা কারখানায় ২৫ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। এটি ডিজেল দিয়ে কিভাবে সাবসিডি দেব?’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *