ধর্ম

মেরাজে নবীজিকে দেওয়া আল্লাহর ৩ উপহার

ইসলামের ইতিহাসে লাইলাতুল মেরাজ অলৌকিক একটি ঘটনা। হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে নবীজি যখন প্রিয়জন হারানোর বেদনায় ব্যথিত ছিলেন, কাফেরদের জুলুম-নির্যাতনে অতিষ্ঠ ছিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে সান্ত্বনাস্বরূপ আরশে আজিমে আমন্ত্রণ করেন। এর মাধ্যমে নবীজীবনের সবচেয়ে বড় মোজেজা প্রকাশ পায়।‌ পুরো মেরাজে লুকিয়ে আছে রহস্য, হিকমত, শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা।

কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘পবিত্র ওই মহান সত্তা, যিনি রাত্রিবেলায় তাঁর বান্দাকে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়াছেন। যার আশপাশকে আমি বরকতময় করেছি। এটা এ জন্য যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাতে পারি।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ১)
লাইলাতুল মেরাজের তারিখ নিয়ে বিভিন্ন বর্ণনা থাকলেও ২৬ রজব দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭ রজব সংঘটিত হওয়ার কথাটি সমাজে প্রসিদ্ধ। শবে মেরাজে প্রিয়নবীকে আল্লাহ তাআলা ৩টি উপহার দিয়েছিলেন। সেগুলো হলো-

১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, মেরাজের রাতে নবী কারিম (স.)-এর ওপর ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়েছিল। পরে তা কমিয়ে শেষ পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত করা হয়। এরপর বলা হলো, হে মুহাম্মাদ! আমার কথার কোনো রদবদল হয় না। আপনার জন্য এই পাঁচ ওয়াক্তের সওয়াব ৫০ ওয়াক্তেরই সমান। (তিরমিজি: ২১৩)
২. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
পবিত্র কোরআনের সর্ববৃহৎ সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের ঈমান শিখিয়েছেন। রহমত কামনা ও দোয়া করার পদ্ধতি শিখিয়েছেন। দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম হওয়ার নীতিমালা দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, জুবাইর ইবনে নুফাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সুরা বাকারাকে আল্লাহ তাআলা এমন দুটি আয়াত দিয়ে শেষ করেছেন, যা আমাকে আল্লাহর আরশের নিচের ভাণ্ডার হতে দান করা হয়েছে। তাই তোমরা এ আয়াতগুলো শিখবে। তোমাদের স্ত্রীদেরকেও শেখাবে। কারণ, এ আয়াতগুলো হচ্ছে রহমত, (আল্লাহর) নৈকট্যলাভের উপায়। (দ্বীন দুনিয়ার সকল) কল্যাণলাভের দোয়া। (মেশকাত: ২১৭৩)
৩. গুনাহগার উম্মতকে ক্ষমার ঘোষণা
রাসুলুল্লাহ (স.)-কে তাঁর সব গুনাহগার উম্মতকে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন। অর্থাৎ অপরাধী মুসলমান শাস্তি ভোগ করে হলেও একদা জানাতে প্রবেশ করবে। কিন্তু কাফির-মুশরিকরা কখনোই ক্ষমা পাবে না। (বুখারি: ৩৮৮৭; মুসলিম: ৩২৮)

হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.)-কে মেরাজ রজনিতে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হলো। তারপর রাসুলুল্লাহ (স.)-কে তিনটি বিষয় দান করা হলো- পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত এবং শিরকমুক্ত উম্মতের মারাত্মক গুনাহ ক্ষমার সুসংবাদ। (মুসলিম: ১৭৩, (হা-এ) ৩২০, ই-ফা ৩২৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *