নাম তার ধীরেন্দ্র প্রসাদ, ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফর্নিয়ার স্যান জোয়াকিন কাউন্টির বাসিন্দা। তিনি ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মার্কিন বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপলে চাকরি করেছেন। এই সময়ে তিনি অ্যাপল থেকে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল অর্থ।
জানা গেছে, অ্যাপলে চাকরির ১০ বছরে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৮০ কোটি ৩৬ লাখ টাকারও বেশি।
মার্কিন আদালতে এ সংক্রান্ত মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ধীরেন্দ্র প্রসাদ। অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় তাকে তিন বছরের জন্য জেলে পাঠিয়েছেন আদালত। সঙ্গে জরিমানা করা হয় ১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০১ কোটি ৫৮ লাখ টাকারও বেশি।
কিন্তু কীভাবে এই বিপুল অর্থ চুরি করেছিলেন ধীরেন্দ্র প্রসাদ? জানা গেছে, ৫৫ বছর বয়সী ধীরেন্দ্র চাকরি করতেন অ্যাপলের গ্লোবাল সার্ভিস সাপ্লাই চেইন ক্রেতা হিসেবে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ধীরেন্দ্র অ্যাপলে কাজ করেছেন। এই সময়ে যন্ত্রপাতি চুরি থেকে শুরু করে ভুয়া বিক্রির মতো একাধিক কারচুপিতে হাত ছিল ধীরেন্দ্রের।
অভিযোগ, ধীরেন্দ্র এমন অনেক জিনিসের জন্য অ্যাপলকে অর্থ পরিশোধে বাধ্য করিয়েছেন, যা সংস্থাটি কখনও হাতেই পায়নি। সব অভিযোগের কথা নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
অ্যাপলের অভিযোগ, ২০১১ সাল থেকে প্রতারণা শুরু করেন ধীরেন্দ্র। তার সঙ্গে এই কাজে শামিল হয়েছিলেন আরও দু’জন। তারা হলেন রবার্ট গ্যারি হ্যানসেন এবং ডন এম বেকার।
বেকারের সংস্থায় অ্যাপল থেকে মাদারবোর্ড এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছিলেন ধীরেন্দ্র। অ্যাপলকে ভুয়া বিল দেখিয়ে টাকা দিতে বাধ্য করেছিলেন।
নিউ ইয়র্কের আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন ধীরেন্দ্রের স্বীকারোক্তি, অ্যাপলের বাক্স থেকে জিনিস চুরি করে তিনি নতুন বাক্সে সেগুলো ভরতেন। তারপর আবার অ্যাপলের অফিসেই সেগুলো পাঠিয়ে দিতেন।
ধীরেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, দেশের সঙ্গে প্রতারণার চক্রান্ত এবং কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কীর্তি ফাঁস হওয়ার পর মার্কিন সরকার তার ৫.৪ মিলিয়ন ডলারের (৫৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা) সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে।
তদন্তকারীরা জানান, কাজের স্বার্থে ধীরেন্দ্রকে স্বতন্ত্রভাবে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছিল অ্যাপল। তিনি সেই ক্ষমতারই অপব্যবহার করে সংস্থাটিকে ঠকিয়েছেন।
বছরের পর বছর ধরে প্রতারণা করেছেন, তবু কেন আগে ধরা পড়েননি ধীরেন্দ্র? অভিযোগ, ধরা পড়ার রাস্তাটিও তিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কোথাও কোনও প্রতারণা হচ্ছে কি না, তা জানার আলাদা পদ্ধতি রয়েছে অ্যাপলের। সেই পদ্ধতিতেও তিনি কারসাজি করেছিলেন বলে অভিযোগ।
প্রতারণার মাধ্যমে ক্রমাগত নিজের আর্থিক লাভের পরিমাণ বাড়িয়ে নিয়েছিলেন ধীরেন্দ্র। ফুলেফেঁপে উঠেছে তার সম্পত্তি। বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে শুরু করেছিলেন তিনি।
নিউ ইয়র্কের আদালতে বিচারক অ্যাপল মামলায় ধীরেন্দ্রকে তিন বছরের কারাবাস ও অ্যাপলকে ২০১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন।