
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মো. আনিসুর রহমান মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ রোববার (৫ জানুয়ারি) দুপুর ১টা ১০ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
হাসপাতালটির জনসংযোগ বিভাগের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, আনিসুর রহমান নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। এছাড়া তিনি বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, অধ্যাপক আনিসুর রহমানের আত্মীয়স্বজন ঢাকায় এ মুহূর্তে নেই। এজন্য তার মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। আগামী মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, আমরা শোকাহত। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনিসুর রহমান স্যার আর নেই। আজ ৫ জানুয়ারি ২০২৫, দুপুরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। দেশ ও গণমানুষের প্রতি তার অবদান আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি। স্যারের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আনিসুর রহমানের জন্ম ১৯৩৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়ায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস এর মহাপরিচালক বিনায়েক সেন বলেন, আনিসুর রহমান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল তার। ১৯৭৫ সালের পর তিনি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় (আইএলও) যোগদান করেন। তিনি সেখানে দীর্ঘ ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি দেশে ফিরে নিজেকে লেখালেখিতে নিয়োজিত করেন। তিনি বিআইডিএস’র জার্নালে লিখেছেন।
তিনি আরও বলেন, আনিসুর রহমান সবসময় অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনার কথা বলতেন। অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনার বিষয়টি তিনি তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রিয় করেছেন। তিনি বেশ ভালো রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন। ষাটের দশক থেকে তিনি ছায়ানটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর তার একাধিক গ্রন্থ রয়েছে। যদি কাউকে রেনেসাঁ ম্যান বলতে হয়, তাহলে তিনি আনিসুর রহমান।
তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘পথে যা পেয়েছি’তে লেখা হয়েছে, ১৯৭৭ সালে আনিসুর রহমান জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার আমন্ত্রণে ওই সংস্থায় যোগ দিয়ে গ্রামীণ উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণের ওপর একটি বিশ্বব্যাপী প্রোগ্রাম সৃষ্টি করে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সেই প্রোগ্রাম পরিচালনা করেন এবং ১৯৯১ সালে দেশে ফিরে আসেন। অংশীদারি গবেষণা এবং আত্মনির্ভর অংশীদারি উন্নয়নের দর্শন ও পদ্ধতিগত প্রশ্নে তার অবদান বিশ্বস্বীকৃত এবং বিভিন্ন দেশে এই কাজে তার চিন্তা ও রচনাবলি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সমাজ ও উন্নয়নদর্শন ছাড়া অধ্যাপক রহমান রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী এবং গবেষক হিসেবে উভয় বাংলায় সুবিদিত।