‘ভালো খেলেছ আর্যবীর শেবাগ। ২৩ রানের জন্য ফেরারিটা মিস করলে। কিন্তু ভালো করেছ, ভেতরকার এই আগুনটা ধরে রাখো এবং আরও অনেক বড় সেঞ্চুরি, ডাবল ও ট্রিপল করো। খেলে যাও’—বীরেন্দর শেবাগের আজকের ইনস্টাগ্রাম পোস্ট।
আর্যবীর শেবাগ, নামেই নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন পরিচয়। হ্যাঁ, ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান বীরেন্দর শেবাগের বড় ছেলে। কথায় আছে না, বৃক্ষ তোমার নাম কি? ফলেই পরিচয়। আর্যবীরের ব্যাটিংয়েও তেমনি ‘নজফগড়ের নবাব’ এর ছাপটা স্পস্ট। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের চার দিনের টুর্নামেন্ট কুচবিহার ট্রফিতে দিল্লি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে মেঘালয়ার বিপক্ষে গতকালই ডাবল সেঞ্চুরি পেয়ে গিয়েছিল আর্যবীর।
আজ ম্যাচের তৃতীয় দিনে সুযোগ ছিল সেটাকে ট্রিপল সেঞ্চুরি বানানোর। কিন্তু খুব কাছে গিয়েও হলো না। ২৯৭ রানে রুদ্র সিং রাঠোরের বলে বোল্ড হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। তবে ফেরার আগে ব্যাটিংটা করে গেছে সে বাবার মতোই। ৩০৯ বলে ২৯৭ রানের এই ইনিংসে ছক্কা ছিল ৩টি, চার ৫১টি। স্ট্রাইক রেট ৯৬.১২। ইনিংসে বাউন্ডারির পরিমাণ ৭৪.৭৫%। ১৮৬ বল ডট দিলেও ৬৩টি সিঙ্গেল ও ৬ বার ২ রান নিয়ে প্রান্ত অদল-বদলেও পরিপক্বতার পরিচয় দিয়েছে ১৭ বছর বয়সী আর্যবীর।
শুধু ট্রিপল সেঞ্চুরি না পাওয়ার জন্য নয়, আর্যবীরের আফসোস হতে পারে আরও একটি কারণে। ২০১৫ সালে ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আর্যবীরের বাবা এবং ক্রিকেট ইতিহাসেরই সবচেয়ে বিধ্বংসী ওপেনারদের একজন শেবাগ একটি তথ্য জানিয়েছিলেন। তিনি তাঁর সন্তানদের বলেছেন, ‘স্কুলের ক্রিকেটেও যদি ৩১৯ রান পেরোতে পারো, তাহলে ফেরারি উপহার দিব।’
৩১৯? শেবাগের ভক্ত হলে আপনি নিশ্চয়ই জানেন, টেস্টে ১৮০ ইনিংসে ৪৯.৩৪ গড়ে ৮২.২৩ স্ট্রাইক রেটে ৮৫৮৬ রান করা সাবেক এই ওপেনারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস সেটি। অর্থাৎ বাবাকে টপকে যেতে পারলে ফেরারি গাড়ি উপহার পেত আর্যবীর। কিন্তু ২৩ রানের দূরত্বে থেকে আউট হওয়ায় সেটি হলো না। রসিকতাপ্রিয় শেবাগ তাঁর সন্তানকে ব্যাপারটি মনে করিয়ে দিয়েই উৎসাহ দিয়েছেন ইনস্টাগ্রাম পোস্টে।
বাবার মতো আর্যবীর বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে বড় রান না পেলেও কখনো নিজের ব্যাটিং স্টাইল পাল্টায়নি। বল মারার জিনিস—বাবার মতো আর্যবীরও এই দর্শনে বিশ্বাসী। তার তিন বছরের ছোট ভাইয়ের নাম বেদান্ত। আর্যবীর সম্পর্কে গত বছর শেবাগ টিভি চ্যানেল স্টার স্পোর্টসকে বলেছিলেন, ‘আমার ছেলের বয়স ১৫ বছর এবং সে এরই মধ্যে আইপিএলে খেলার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে।’
তবে সন্তানদের বাবার মতোই হতে হবে, এমনটাও মনে করেন না শেবাগ। ২০২৩ সালে সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমি তাদের মধ্যে আরেকজন বীরেন্দর শেবাগ দেখতে চাই না। তারা বিরাট কোহলি, হার্দিক পান্ডিয়া কিংবা ধোনি হতে পারে। কিন্তু ক্রিকেটারই হতে হবে, এমনটাও নয়। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো ক্যারিয়ার বেছে নিতে পারে এবং আমরাও সাহায্য করব। কিন্তু আসল কথা হলো, ভালো মানুষ হতে হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই।’