আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলের শিশু নিষ্পাপ তাহলে ফিলিস্তিনি শিশু কী ?

ইসরায়েলের শিশু নিষ্পাপ আর ফিলিস্তিনি শিশু কি অভিশপ্ত, এই প্রশ্নটি আসলে বৈশ্বিক রাজনীতির মধ্যে বড় একটি দ্বৈতনীতি ও মানবিক সংকটের চিত্র তুলে ধরে। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের চলমান হামলা কেবল তাদের দুই জাতির সমস্যা নয় বরং মধ্যপ্রাচ্যের অসহায় মানুষকে পুঁজি করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, রাশিয়া ও মুসলিম বিশ্বসহ বিভিন্ন শক্তির রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ।

Play Video

এ লেখা যখন লেখা হচ্ছে তখন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার (০১ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে জানায় যে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৮৪ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৫০ জন শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্ক। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১৮৬ জন।

Play Video

এসব ঘটনায় বিশ্বের বেশিরভাগ গণমাধ্যম ইসরায়েল নিজেকে প্রতিরক্ষায় ভুক্তভোগী হিসেবে তুলে ধরলেও ফিলিস্তিনি শিশুদের কষ্টগুলো প্রায়শই উপেক্ষিত থেকে যায়। এ ছাড়া ফিলিস্তিনি শিশুদের প্রতি সহিংসতা ও হত্যার ঘটনা বেশিরভাগ সময় পশ্চিমা গণমাধ্যমে যথাযথভাবে প্রকাশ হয় না। এতে মানবিক মূল্যবোধের প্রশ্ন দেখা দেয় এবং পশ্চিমা গণমাধ্যমের ভূমিকা ও নীতি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।

Play Video

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের প্রধান মিত্র সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে। ইসরায়েল মার্কিন সমর্থনে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে আগ্রাসন ও গণহত্যার মতো কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের এই সমর্থন ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সহানুভূতির ঘাটতি তৈরি করে। তখন বিশ্বের মানবাধিকার যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যায় তখন তা প্রকৃত মানবাধিকার আর স্বার্থের বিপরীতে গেলে তা দেখেন না দেখার ভান করা কিংবা মুখ রক্ষার্থে কিছু শব্দের অপচয় করা, যা পর্যবেক্ষণ করে মুসলিম বিশ্বের বিষহীন ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

Play Video

এ ইস্যুগুলো নিয়ে মুসলিম বিশ্বে সাধারণ জনগণের ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি থাকলেও বিভিন্ন মুসলিম দেশের মধ্যে ঐক্যের অভাব রয়েছে। সৌদি আরব, ইরান, তুরস্ক ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের জন্য কথা বলে, কিন্তু তাদের মধ্যে ভূরাজনৈতিক স্বার্থ নিয়ে মতপার্থক্য থাকায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। ফলে ফিলিস্তিনিদের অসহায়ত্ব নিয়ে লাভ-লোকসান খেলার চক্র চলে।

Play Video

এ ছাড়া ইউরোপীয় দেশগুলোও মাঝে মাঝে মানবাধিকার ও সমতার কথা বললেও ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল। গণহত্যায় আক্রান্ত ফিলিস্তিনিদের কিছু ত্রাণ বা অন্যান্য সেবা পাঠিয়ে কাফফারা দেওয়া নতুন কৌশলের আশ্রয় নেয়। তাদের নীতিতেও দ্বিচারিতা লক্ষ করা যায়, যা অভ্যন্তরীণভাবে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করলেও ক্ষমতা কাঠামোর অংশীদার না হওয়ায় তা কার্যকর প্রভাব ফেলে না।

Play Video

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধে থাকা রাশিয়া ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে কথা বললেও তাদের এ অবস্থান প্রায়ই নিজস্ব কৌশলগত স্বার্থে হয়ে থাকে। তারা মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বজায় রাখতে চায় এবং পশ্চিমা শক্তিগুলোর নীতির বিপরীতে অবস্থান নিয়ে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে কথা বলে। তবে এটি মূলত রাশিয়ার রাজনৈতিক স্বার্থের অংশ।

বিশ্বের জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ জানালেও কার্যকর পদক্ষেপে নেওয়ার স্বাধীনতা ও সক্ষমতা নেই। দেখে মনে হয় শক্তিশালী দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষার জন্য এসব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার জন্ম। একটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন যখন ধনী আর গরিবের মধ্যে আইনি লড়াই হয় তখন ধনী পক্ষ জিতে যায় আর যখন ধনী বনাম ধনীর আইনি লড়াই হয় তখন আইন হেরে যায়। সে কথাটি মনে পড়ছে এখন। মাঝখানে ফিলিস্তিনিদের মতো অভাগা জাতি ন্যায়বিচারের আশা করে বিভিন্ন পক্ষের কাছে দারস্ত হয়। সে দ্বারস্থ হওয়ার ফায়দাও তুলে নানা পক্ষ।

উল্লিখিত বাক্যটি শুধু বাক্য নয়, অসহায় মানুষের মনের প্রশ্ন। বৈশ্বিক রাজনীতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। ফিলিস্তিনি শিশুদের প্রতি অবহেলা এবং ইসরায়েলি শিশুদের প্রতি অতিরিক্ত সহানুভূতি শুধু দ্বৈতনীতিকেই নয় বরং মানবিক মূল্যবোধের সংকটকেও প্রকাশ করে। মানবাধিকারের ঠিকাদারি যে দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে রেখেছে এবং প্রতিনিয়ত সার্টিফিকেট বিক্রি করে মোড়লের ভূমিকা পালন করে আজ তাদের দ্বৈতনীতি এবং মুসলিম বিশ্বের বিভক্তি ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা প্রতিরোধে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button