০৩:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডিভোর্সের পর সন্তানের দায়িত্ব কাকে নিতে হবে? আইন যা বলছে

বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদের (ডিভোর্স) পরেও সন্তানের দায়িত্ব, তত্ত্বাবধান এবং ভরণপোষণের নিয়মগুলো সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত। ব্যারিস্টার আঞ্জুম আরা লিমা ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইনি দিকগুলো তুলে ধরেছেন, যা বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পরও সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করে।
সন্তানের তত্ত্বাবধান (Custody) আইন অনুযায়ী, সন্তানের প্রাথমিক তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে মায়ের অধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে:
মেয়ে সন্তান: ৯ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকবে।
ছেলে সন্তান: ৭ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকবে। উভয় ক্ষেত্রেই এই নির্দিষ্ট বয়সের পর আদালত সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে যে, সন্তান কার কাছে থাকবে।
বাবা-র সাক্ষাৎ অধিকার (Visiting Rights) সন্তান মায়ের কাছে থাকলেও, বাবা সন্তানের সাথে দেখা করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন না। আদালত পরিস্থিতি ও সন্তানের সুবিধা বিবেচনা করে সপ্তাহে বা মাসে নির্দিষ্ট কিছু দিনের জন্য বাবার ‘ভিজিটিং রাইটস’ নির্ধারণ করতে পারে।
ভরণপোষণ ও খরচ বহনের দায়িত্ব আইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো, সন্তান মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকলেও বাবার উপরই সন্তানের সম্পূর্ণ খরচ বহনের দায়িত্ব থাকে। এই দায়িত্ব অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এই খরচের মধ্যে রয়েছে:
খাবার ও বাসস্থান
শিক্ষা ও চিকিৎসা
অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভরণপোষণ সন্তান সাবালক বা সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত বাবার এই দায়িত্ব চলমান থাকে।
আইনি, ধর্মীয় ও নৈতিক দায় ব্যারিস্টার আঞ্জুম আরা লিমার মতে, সন্তানের খরচ বহন করা বাবার জন্য কেবল একটি আইনি বিষয় নয়, এটি নৈতিক ও ধর্মীয় দায়বদ্ধতাও।
আইন অনুযায়ী, বাবা হলেন সন্তানের ন্যাচারাল ও বায়োলজিকাল গার্ডিয়ান (স্বাভাবিক ও জৈবিক অভিভাবক)।
ইসলাম ধর্ম অনুযায়ীও সন্তানের উপরে বাবার হক রয়েছে, যা অস্বীকার করা যায় না।
মা একা নন, এই ভরণপোষণ আইনগতভাবে বাবার শতভাগ দায়।
সম্পত্তির উত্তরাধিকার অধিকার সন্তানের সম্পত্তির অধিকার প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার লিমা স্পষ্ট করে বলেন, বাবা-মায়ের মধ্যে ডিভোর্স হলেও সন্তান তার বাবার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারসূত্রে অধিকার পাবে। এটি একটি স্বাভাবিক এবং অটল অধিকার, যেখানে কোনো ব্যতিক্রম নেই। এছাড়া, সন্তানের ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষার জন্য বীমা বা ইনস্যুরেন্স করার বিষয়টিও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
ব্যারিস্টার লিমার ভাষায়, “বাবা-মা ডিভোর্স করলেও সন্তানের খরচ চালানোর দায়িত্ব বাবার উপরেই থাকবে। এটা তার নৈতিক, ধর্মীয় ও আইনগত দায়। এই দায়িত্ব অস্বীকার করার সুযোগ নেই।”

ট্যাগ
জনপ্রিয় সংবাদ

ডিভোর্সের পর সন্তানের দায়িত্ব কাকে নিতে হবে? আইন যা বলছে

আপডেট সময়ঃ ০১:০৩:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদের (ডিভোর্স) পরেও সন্তানের দায়িত্ব, তত্ত্বাবধান এবং ভরণপোষণের নিয়মগুলো সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত। ব্যারিস্টার আঞ্জুম আরা লিমা ২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইনি দিকগুলো তুলে ধরেছেন, যা বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পরও সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করে।
সন্তানের তত্ত্বাবধান (Custody) আইন অনুযায়ী, সন্তানের প্রাথমিক তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে মায়ের অধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে:
মেয়ে সন্তান: ৯ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকবে।
ছেলে সন্তান: ৭ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকবে। উভয় ক্ষেত্রেই এই নির্দিষ্ট বয়সের পর আদালত সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে যে, সন্তান কার কাছে থাকবে।
বাবা-র সাক্ষাৎ অধিকার (Visiting Rights) সন্তান মায়ের কাছে থাকলেও, বাবা সন্তানের সাথে দেখা করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন না। আদালত পরিস্থিতি ও সন্তানের সুবিধা বিবেচনা করে সপ্তাহে বা মাসে নির্দিষ্ট কিছু দিনের জন্য বাবার ‘ভিজিটিং রাইটস’ নির্ধারণ করতে পারে।
ভরণপোষণ ও খরচ বহনের দায়িত্ব আইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো, সন্তান মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকলেও বাবার উপরই সন্তানের সম্পূর্ণ খরচ বহনের দায়িত্ব থাকে। এই দায়িত্ব অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। এই খরচের মধ্যে রয়েছে:
খাবার ও বাসস্থান
শিক্ষা ও চিকিৎসা
অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভরণপোষণ সন্তান সাবালক বা সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত বাবার এই দায়িত্ব চলমান থাকে।
আইনি, ধর্মীয় ও নৈতিক দায় ব্যারিস্টার আঞ্জুম আরা লিমার মতে, সন্তানের খরচ বহন করা বাবার জন্য কেবল একটি আইনি বিষয় নয়, এটি নৈতিক ও ধর্মীয় দায়বদ্ধতাও।
আইন অনুযায়ী, বাবা হলেন সন্তানের ন্যাচারাল ও বায়োলজিকাল গার্ডিয়ান (স্বাভাবিক ও জৈবিক অভিভাবক)।
ইসলাম ধর্ম অনুযায়ীও সন্তানের উপরে বাবার হক রয়েছে, যা অস্বীকার করা যায় না।
মা একা নন, এই ভরণপোষণ আইনগতভাবে বাবার শতভাগ দায়।
সম্পত্তির উত্তরাধিকার অধিকার সন্তানের সম্পত্তির অধিকার প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার লিমা স্পষ্ট করে বলেন, বাবা-মায়ের মধ্যে ডিভোর্স হলেও সন্তান তার বাবার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারসূত্রে অধিকার পাবে। এটি একটি স্বাভাবিক এবং অটল অধিকার, যেখানে কোনো ব্যতিক্রম নেই। এছাড়া, সন্তানের ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষার জন্য বীমা বা ইনস্যুরেন্স করার বিষয়টিও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
ব্যারিস্টার লিমার ভাষায়, “বাবা-মা ডিভোর্স করলেও সন্তানের খরচ চালানোর দায়িত্ব বাবার উপরেই থাকবে। এটা তার নৈতিক, ধর্মীয় ও আইনগত দায়। এই দায়িত্ব অস্বীকার করার সুযোগ নেই।”