
আমরা প্রায়ই রাতের ঘুমে ব্যাঘাত অনুভব করি – হঠাৎ করে মাঝ রাতে জেগে ওঠা, বারবার চোখ খুলে যাওয়া, কিংবা ঘুম ভেঙে গেলে আবার ঘুম না আসা। অনেকে বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব না দিলেও এটি হতে পারে একটি ভয়ংকর রোগের ইঙ্গিত। নিয়মিতভাবে ঘুমে বিঘ্ন ঘটলে, তা শরীর ও মস্তিষ্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
কেন ঘুমের মধ্যে বারবার জেগে ওঠেন?
১. স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea)
স্লিপ অ্যাপনিয়া এমন একটি শারীরিক সমস্যা যেখানে ঘুমের সময় শ্বাসপ্রশ্বাস বারবার বন্ধ হয়ে যায়। এতে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, ফলে মস্তিষ্ক ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। এটি দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
২. অ্যাংজাইটি বা মানসিক চাপ
মানসিক চাপ বা উদ্বেগ থাকলে ঘুম গভীর হয় না। অনেকেই রাতের বেলা চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠে পড়েন। এটি দীর্ঘমেয়াদে ইনসোমনিয়ায় রূপ নিতে পারে।
৩. রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম (Restless Leg Syndrome)
এই সমস্যায় পায়ের মধ্যে অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়, যা রোগীকে বারবার পা নড়াতে বাধ্য করে এবং ঘুম ব্যাহত হয়।
৪. হরমোনের অসামঞ্জস্যতা
বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজ, থাইরয়েড সমস্যা বা অন্যান্য হরমোনজনিত অসামঞ্জস্যতার ফলে ঘুমে বিঘ্ন ঘটে।
৫. অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা ক্যাফেইন গ্রহণ
রাতে বেশি পরিমাণে কফি বা অ্যালকোহল পান ঘুমের স্বাভাবিক চক্রকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ফলে মাঝরাতে জেগে ওঠার প্রবণতা বাড়ে।
কীভাবে বুঝবেন বিষয়টি গুরুতর?
প্রতি রাতে একই সময়ে ঘুম ভেঙে যায়?
দিনে অতিরিক্ত ঘুম ঘুম লাগে বা কাজের মনোযোগে সমস্যা হয়?
মাথা ভার লাগা বা মেজাজ খিটখিটে থাকে?
পার্টনার জানায় আপনি ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন বা শ্বাস আটকে যায়?
উপরোক্ত উপসর্গ থাকলে দেরি না করে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সমাধান ও প্রতিরোধ
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
ঘুমানোর আগে ফোন, ল্যাপটপ থেকে দূরে থাকুন।
ঘর ঠান্ডা, অন্ধকার ও শান্ত রাখুন – এটি গভীর ঘুমে সহায়তা করে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্লিপ স্টাডি বা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান।
শেষ কথা
ঘুমের মধ্যে বারবার জেগে ওঠা একটি সাধারণ সমস্যা মনে হলেও এটি একটি বড় রোগের পূর্বাভাস হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে আপনি ফিরে পেতে পারেন নিরবচ্ছিন্ন ও স্বাস্থ্যকর ঘুম।