অন্যান্য

অভয়নগরে মাদকের ছড়াছড়ি, ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ, বাড়ছে কিশোর অপরাধ

মোঃ কামাল হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

Play Video

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় মাদকের ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ, বাড়ছে ছিনতাইসহ নানা রকম কিশোর অপরাধ। উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গড়ে ওঠা মাদক সিন্ডিকেটের কবলে যুবসমাজ ও উঠতি বয়সী কিশোর। জানা গেছে, মাদক বিক্রেতার কবলে পুরো গ্রাম মাদক বিক্রি ও সেবনে সয়লাব। তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতরা কৌশলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যুবক যুবতীদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের মরণ নেশা মাদক পৌছে দেয়। ফলে, মরণ নেশা মাদক সেবন করে উঠতি বয়সী কিশোরেরা বিভিন্ন অপরাধ করে সমাজে কিশোর গ্যাং নামে অপরাধ চক্রের আত্মপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। সমাজে কিছু অসাধু ক্ষমতাধর ব্যক্তিরাও রয়েছে সক্রিয় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। যে কারণে ওই সব মাদক ব্যবসায়ীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরেজমিনে দেখা যায়, এসব মাদক ব্যবসায়ীরা ও সেবনকারীরা বড় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে প্রকাশ্য করছে মাদক ব্যবসা ও সেবন। ফলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতের নাগালে থাকলেও পর্যাপ্ত তথ্য প্রমানের অভাবে তাদের বিরুদ্ধে নিতে পারেনা কঠোর ব্যবস্থা। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কিছু ছোটখাটো মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারের অভিযান পরিচালনা করলেও বিভিন্ন কারণে তাদের থেমে যেতে হয়। ফলে, মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীরা রয়েছে বহালতবিয়তে। যে কারণে উপজেলা ব্যাপি উঠতি বয়সী যুবক যুবতীরা ধ্বংস হচ্ছে, গড়ে উঠছে ছোট-বড় কিশোর গ্যাং, অভিভাবক মহল রয়েছে চরম বিপাকে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অনেকে চুরি ছিনতাই করছে। আবার কেউ মা বাবার সাথে করছে অমানবিক খারাপ আচার-আচরণ এবং মাদকাসক্ত সন্তান মাদকের টাকার জন্য বাড়ির মালামাল ভাংচুর বিক্রিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কিছুতেই মাদকাসক্ত সন্তানদের মরণ নেশা মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে পারছেনা অভিভাবক মহল। উপজেলার বাগদাহ গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার ছোট ছেলে আবু হাসান(১৪) মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে, তাকে নিয়ে আমি ও আমার স্ত্রী খুবই বিপদে আছি, ঘরের একটা মাল জিনিসপত্র ও নেই, ওই ছেলে সব বিক্রি করে ফেলেছে, কিছু বলতে গেলেই তেড়ে আসে মারপিট করতে। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে উপজেলার বর্ণি, হরিষপুর, বাগদাহ, চলিশিয়া, কোটা বকুলতলায় একাধিক মাদক ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্য মাদক ব্যবসা করছেন। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন না করায় এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনাসহ কৌতুহলের শেষ নেই। জানা গেছে, ওইসব মাদক বিক্রেতারা আশপাশের সব স্থানে যুবকদের কাছে প্রকাশ্যে গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ নানাধরণের মাদক বিক্রি করে। অন্য দিকে উপজেলার দেয়াপাড়া ১ নং ওয়ার্ডের খানপাড়া নামে পরিচিত এলাকায় নতুন করে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক প্রকাশ্য সেবন বিক্রি হলেও পুলিশের নেই কোন ভূমিকা। জানা গেছে, আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী নজির নামে এক মাদক ব্যবসায়ী ইজিবাইক চালানোর আড়ালে ঐ এলাকায় তার মেয়ে জামাই এর মাধ্যমে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি ও সেবনের এক রমরমা ব্যবসা শুরু করেছে। ফলে, ঐ এলাকার উঠতি বয়সী যুবকরা মাদকের ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে বলে এলাকার একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন। তারা পুলিশের কাছে আবেদন করে জানিয়েছেন দ্রুত এই এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করে কঠোর ব্যবস্থার মাধ্যমে এলাকাকে মাদক মুক্ত করা হোক। অন্যদিকে অভয়নগর উপজেলা পুলিশের তালিকাভূক্ত একাধিক মাদক ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্য মাদক বিক্রি করছে যা একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ফলে, যুবকদের বুক ফুলিয়ে নওয়াপাড়ার অলিগলিতে মাদক সেবন করতে দেখা যায়। তথ্য অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে মাদক সেবনের এক অভিনব কৌশল। নওয়াপাড়া বউবাজার এলাকায় লুৎফরের চা দোকানের সামনে সন্ধ্যার পর দেখা যায় সুন্দরী মহিলাদের আড্ডা? যেখানে বসে কৌশলের মাধ্যমে মাদক সেবন করে ওই নারীরা। তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ওই নারীরা মাদক সেবনের জন্য ছোট বাচ্চাদের ব্যবহার করে। সেই সব ছোট বাচ্চারা নওয়াপাড়া ড্রাইভারপাড়ার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গোপনে মাদক এনে ওই নারীদের কাছে এনে দেয়। ফলে, পুলিশের নাগের ডগায় এমন পন্থায় মাদক ব্যবসা সেবন করলেও থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। উপজেলার সকল গ্রাম ও নওয়াপাড়া শহরে এখন মাদক ব্যবসা সেবন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। এসব এলাকার মধ্যে সব থেকে মাদক বেঁচা বিক্রি পয়েন্ট গুলো হলো, ভৈরব সেতুর আশপাশের এলাকা, চেংগুটিয়া ঘাট এলাকা, দেয়াপাড়া, শংকরপাশা, লেবুগাতী ব্রিজ এলাকা,ধোপাদী, ভাঙ্গাগেট, লক্ষিপুর, আলীপুর, চলশিয়া, বারান্দি, রানাগাতি, সিদ্দিপাশা, রাঙ্গার হাট, গোপিনাথপুর, মথুরাপুর, হরিশপুর, বর্ণি, কামকুল, প্রেমবাগ, জিয়াডাঙ্গ,আমডাঙ্গা,পায়রাসহ নওয়াপাড়া পৌরসভার ড্রাইভারপাড়া,কলোনি এলাকা, হাজি সাহেবের বাফার ঘাট, মালেক হাজির গোডাউনের পেছনে রেললাইনের উপর, রেলওয়ে কোয়ার্টার এলাকা, প্রফেসরপাড়া, বুইকরা হাসপাতাল এলাকা, রাজঘাট, তালতলাসহ অভয়নগর উপজেলায় মাদক ব্যবসা সেবন সব এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। সচেতন মহল মনে করে, পুলিশের তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জরুরি কঠোর ব্যবস্থা না নিলে কোমলমতি যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে পড়বে। অন্যদিকে একাধিক বিশিষ্ট নাগরিক জানিয়েছেন, সম্প্রতি চুরি, ছিনতাই হামলাসহ নানাবিধ অপরাধ বেড়ে যাওয়ার কারণ, মাদক ব্যবসা ও সেবন, এসব মাদক সিন্ডিকেট শিকড় থেকে উপড়ে ফেলতে হবে, না হলে সমাজে এই মাদকের ভয়াল থাবা থেকে আমরা কেউ নিরাপদ নয়। এবিষয়ে অভয়নগর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) এসএম আকিকুল ইসলাম জানান, মাদক নির্মুলে আমার থানার প্রতিটি অফিসার কাজ করে যাচ্ছে, কিছুতেই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবেনা, আমি নতুন থানায় যোগদান করেছি, সামনে নির্বাচন, সব মিলিয়ে ব্যস্ত থাকলেও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যহত আছে।

Play Video

Play Video

Play Video

Play Video

Play Video

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button